ক্ষমতার দাপট আছে যার, প্রতিদিন মাছ বাজারের ৪০ হাজার টাকা বখরা তার

'ক্ষমতার দাপট আছে যার, প্রতিদিন মাছ বাজারের আদায়কৃত ৪০ হাজার টাকা বখরা তার' এটি কোন রুপ কথার গল্প সিনেমা নয়। এটি পটুয়াখালীর কলাপাড়া চৌরাস্তা ইজারাবিহীন মাছ বাজারের বাস্তব অবস্থা। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে চলছে এমন ঘটনা। আ'লীগ সরকার পতনের পর সাধারন মানুষ ভেবেছিল অবস্থার পরিবর্তন হবে। এবার অন্তত: মাছ বাজারটি ইজারার আওতায় আসবে। আদায়কৃত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়বে। কিন্তু ক্ষমতার পট পরিবর্তনে কেবল মাত্র হাত বদল হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের মন্তব্য বাজারটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় বসায় তারা পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে এটি তারা জানতেন না। দ্রুত নোটিশ সরবরাহ করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউই।
সূত্র জানায়, বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন নাচনাপাড়া চৌরাস্তা মাছ বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার টাকা কালেকশন করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রত্যুষ থেকে মাত্র তিন-চার ঘণ্টায় অন্তত: পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকার মাছ বেঁচাকেনা হয় এ বাজারে। আবার আড়তে যারা মাছ বিক্রি করতে আনেন তাদের কাছ থেকেও শতকরা পাঁচ টাকা হারে টোল আদায় করা হচ্ছে।
এ বাজারের সবচেয়ে বেশি টাকা লেনদেন হয় চট কেন্দ্রীক। অর্থাৎ যারা মাছ বেচাকেনা করেন, তারা হাত বাই হাত জায়গা নিয়ে সেখানে মাছ মজুত করে নিলাম ডেকে কেনা বেঁচা করেন। ওই নিলাম ডাকা ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট জায়গার (চট) জন্য আয়তন ভেদে দৈনিক সর্বনিম্ন দুশ’ টাকা থেকে তিনশ’ টাকা দিতে হয়। এর জন্য একজন কালেকশম্যান রয়েছে। এভাবে অন্তত ৫০টি উঁচু চৌকির মতো (চট) রয়েছে। যেখান থেকে মাসে অন্তত: ১২ লাখ টাকা ক্ষমতার দাপটে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
অথচ প্রশাসন, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আর এত বছরে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর কেনা বেঁচায় দুই ধাপে শতকরা ১০ টাকা হারে কালেকশন হয় দৈনিক আরও অন্তত: ২০ হাজার টাকা। তাতেও বছরে লেনদেন হয় ৭৫ লাখ টাকা।
চৌরাস্তা মাছ বাজারে মাছ কিনতে আসা আমতলীর ব্যবসায়ী নুর হোসেন জানান, তিনি আট হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের মাছ কিনেছেন। এ জন্য শতকরা পাঁচ টাকা হারে ৪০০ টাকা বিক্রেতাকে দিয়েছেন।
সূত্রটি আরও জানায়, পৌরশহরের বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন হলেও এটির অবস্থান টিয়াখালী ইউনিয়নের মধ্যে। এটি চৌরাস্তা মাছ বাজার হিসেবে পরিচিত হলেও এর সামনে সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে নাচনাপাড়া মডেল মৎস্য আড়ৎ। এভাবে এই মাছ বাজার থেকে বছরে দেড় কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে আদায় করা হয়। বিগত ১৫ বছরে এই একটি মার্কেট থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। অথচ সরকার এক টাকারও রাজস্ব আয় করতে পারেনি।
স্থানীয়দের দাবি মাছ বেচকেনায় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মাছ বাজারটির গুরুত্ব রয়েছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হলে এখান থেকে সরকারের প্রতি বছর কমপক্ষে অর্ধ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের সুযোগ রয়েছে।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবৈধ এই মার্কেটটি চালু করেন তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা মশিউর রহমান শিমু। আগস্ট পরবর্তী সময় শিমু নেই। নেই তার নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু তার চালু করা নগদ টাকা আয়ের এই সিস্টেমটি সচল রয়েছে। শুধু আদায়কারী ও জমাকারী বদলেছে। বদলায়নি সিস্টেম। স্থানীয় দোকানি, ক্রেতা-বিক্রেতার সহ সাধারন মানুষ চায় এই মার্কেটটি বৈধ করে সরকারিভাবে বহাল রাখা দরকার। এতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চাহিদা পূরণ হবে। কিন্তু রহস্য জনক কারনে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, এটি তারা জানতেন না। দ্রুত নোটিশ সরবরাহ করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
কলাপাড়া ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম জানান, এটি নিয়ে বেশ কয়েকবার উদ্দোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হওয়ায় এটি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। এরপরও বিষয়টি জেলা প্রশাসনের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
Comments