ঢাকার রাজপথে আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে : সালাউদ্দিন আহমেদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিগত ১৬ বছরে সাত হাজারেরও বেশি মানুষকে অপহরণ, গুম এবং সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে হত্যা করেছে। সর্বশেষ তারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৪শ' মানুষকে হত্যা করেছে। এছাড়া তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন গণতন্ত্র এবং ভোটের অধিকারসহ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ধ্বংস করেছে। লুটপাট করে ব্যাংকিং খাতও ধ্বংস করেছে। এসব কারণে আওয়ামী লীগ নিজেরাই নিজেদের রাজনৈতিক মৃত্যু ডেকে এনেছে। ঢাকার রাজপথে আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে।
শনিবার (১৭ মে) খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিপুল সংখ্যক তরুণ নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সঞ্চালনায় ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ২০১৪ ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে যারা ভোটার হয়েছেন 'আমি আর ডামি' নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারেননি। এভাবে এ তিনটি নির্বাচনে পাঁচ কোটি তরুণ যুবক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশে সংগঠিত হয়েছে রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থান। এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক অধিকারের স্বপ্ন দেখছে মানুষ। দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আর রক্ত দিতে হবে না, মিছিল করতে হবে না এ প্রত্যাশা সবার।
আওয়ামী লীগ দেশে খুনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিল উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ১৪শ' মানুষকে হত্যা করেছে। হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ মেরেছে তারপরেও সে অনুতপ্ত হয়নি, ক্ষমা চাইনি। উল্টো দিল্লিতে বসে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
সালাউদ্দিন আহমেদ ডক্টর ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে 'এনসিপি মার্কা সরকার' বলে মন্তব্য করে বলেন, আপনার সরকারের দুইজন উপদেষ্টা এনসিপির প্রতিনিধি। তাদেরকে পদত্যাগ করতে বলেন অথবা বিদায় করে দেন। এছাড়া সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকেও তিনি পদত্যাগ করার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনাকে একমাত্র ম্যান্ডেট দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন করার জন্য। রোজ কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হয়নি। জরুরী সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু আপনি আশ্বস্ত করেও সে কথা রাখেননি।
সংস্কার এবং আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া চলমান উল্লেখ করে তিনি দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে ইউনুস সরকারকে বিদায় নেয়ার আহ্বান জানান।
সালাউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার মাধ্যমে একটি আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে মানুষ। এ দফার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ দেশের তরুণরাই ৩১ দফা বাস্তবায়নের এম্বাসেডর হিসেবে ভূমিকা পালন করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বিকাল সাড়ে চারটায় অনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হলেও বেলা ১১ টার পর থেকেই খুলনা এবং বরিশালের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও মহানগর থেকে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা মিছিল নিয়ে খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে হাজির হয়। মিছিল আর শ্লোগানে মহানগরী খুলনা উত্তাল হয়ে ওঠে।
Comments