
নোয়াখালীর হাতিয়ায় মেঘনা নদীর তীরের মাটি ট্রাকে ভরে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। শনিবার (১৭ মে) সকাল ৮টায় সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রমিকরা নদীর তীরে মাটি কাটছেন। শ্রমিকরা ইব্রাহিম সর্দার নামে এক বিএনপি নেতার মাটি কাটছেন বলে স্বীকার করেছেন।
মো. ইব্রাহিম সর্দার হাতিয়া উপজেলার হরণী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।
স্থানীয়রা জানান, হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নসহ প্রায় সব ইউনিয়নই নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙনের কারণে বহু মানুষের বসতভিটা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙন রোধের দাবিতে স্থানীয়রা এর আগেও মানববন্ধন করেছেন। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
হরণী ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, "আমাদের বংশের কয়েক পরিবার সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমরাও ভাঙনের তীরে চলে এসেছি। ভাঙন ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। অনেকেই সাত-আটবার নদীগর্ভে বসতভিটা হারিয়েছেন। কয়েকটি গ্রুপ ভেকু দিয়ে তীরের মাটি কেটে নিয়ে যায় এবং অবৈধ বালুর ব্যবসা করে। বালুর জন্য বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ বাড়িঘরে থাকতে পারে না। আগের সরকারের আমলেও হয়েছে, এখনও মাটি কাটা চলছে। কিছু বলতে গেলে উল্টো আমাদের হত্যার হুমকি দেয়।"
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মো. ইব্রাহিম সর্দার গণমাধ্যমে মাটি কাটার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, "গত ১৬ বছর বিএনপি করে আমি নির্যাতিত। আমাকে সবাই ভালো মানুষ হিসেবে চেনে। আমার নিজের দোকানভিটা ভরাট করার জন্য নিজের জায়গা থেকে মাটি কাটছি। মাটি কাটার জন্য নদী দ্রুত ভাঙে এটা সত্য। আমার দরকার তাই মাটি কাটছি। এছাড়া আমি কোনো অন্যায় অনিয়মের মধ্যে নাই।"
এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং এছেন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়াছিন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে বলেন, "আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে হরণী ও চানন্দী ইউনিয়ন মূল হাতিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সুবর্ণচর উপজেলার ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে দায়িত্ব দেওয়া আছে। তারাই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।"
উল্লেখ্য, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২১ এর খসড়ায় অবৈধভাবে সরকারি বা বেসরকারি ভূমি, নদীর পাড়, তলদেশ ইত্যাদি থেকে মাটি বা বালু উত্তোলনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই অপরাধের জন্য ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।
Comments