
আজ শুক্রবার সকাল পৌনে ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকার চুনকা কুটির থেকে সাবেক সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে হত্যার শিকার মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি।
আইভীকে গ্রেপ্তারের পর নিন্দা জানিয়ে আজ সকালে ফেসবুকে এক পোস্টে রফিউর রাব্বি লেখেন, ‘ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আজ সকালে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আমরা এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানাই। নারায়ণগঞ্জকে নরক বানিয়ে রাখা শামীম ওসমানকে সরকারের বাহিনী সসস্মানে দেশ থেকে পালাতে সহায়তা করল, তার পরিবারকে বিএনপির নেতারা পালাতে সহায়তা করল আর আইভীকে করা হলো গ্রেপ্তার। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। তিনি শামীম ওসমানকে সাথে নিয়ে হত্যা করেছেন। যে শামীম ওসমানের সাথে তার সাপ-নেউলের সম্পর্ক তাকে সাথে নিয়ে আইভী হত্যা করেছেন? একদিকে সরকার বলছে মামলা হলেই কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। তদন্ত করে প্রমাণ পেলে গ্রেপ্তার। আবার এমনি রাতভর বাড়ি ঘিরে রেখে সকালে গ্রেপ্তার।’
অন্তর্বর্তী সরকারের অনেকের অতি উৎসাহের কারণে অনেক কাজ বিতর্ক সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে রফিউর রাব্বি লেখেন, ‘৫ আগস্টের পরে আইভীতো কোথাও পালিয়ে যাননি। নিজের বাড়িতেই ছিলেন, তাহলে রাতভর এসবের কী প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে সরকারের কারো কারো অতি উৎসাহের কারণে, অনেক কাজে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে, ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। আমরা দেখছি সরকার অনেক কিছুই সামাল দিতে পারছে না।’
আইভী দলবাজি করেনি উল্লেখ করে ত্বকীর বাবা লেখেন, ‘আইভী যতদিন চেয়ারম্যান-মেয়র ছিলেন তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেননি। দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে বিএনপি জামায়াত সহ সকল দলের লোকদের সমান সহযোগিতা করেছেন। তিনি দলবাজি করেনি। দেশের বিভিন্ন পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন যেভাবে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় হয়ে উঠেছিল নারায়ণগঞ্জে আইভী তা করেননি। আর সে জন্যই শেখ হাসিনার সুনজরে তিনি যেতে পারেননি। ২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে শেখ হাসিনা দলের সমর্থন শামীম ওসমানকে দিয়েছেন, আইভীকে নয়। আইভী সবসময় দলের লোকদের অন্যায়-অপরাধের প্রতিবাদ করেছেন। এই জন্য শেখ হাসিনা ছিলেন তার প্রতি ক্ষুব্ধ। দলের প্রায় অনেকেই যখন হত্যা, চাঁদাবাজি, দখল, সন্ত্রাস করে চলেছে তিনি তখন তার প্রতিবাদ করেছেন।’
দুদকের অভিযোগের বিষয়ে রফিউর রাব্বি পোস্টে লেখেন, ‘শামীম ওসমান তার বিরুদ্ধে তিনবার দুদকে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত করে কিছু পায়নি। ৫ আগস্টের পরে দুদক আবার আইভীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এখনো কিছু পায়নি। তদন্তে আইভীর সাতটি ব্যাংক হিসাব আছে বলে রিপোর্ট দিয়েছে। এই সাতটির সবগুলোই ভুল, কোনটিই তার নয়। অথচ তার নিজের নামে যে হিসাব তারই উল্লেখ করে নি দুদক। দুদক এখনো কতটা প্রভাবমুক্ত হতে পেরেছে জানি না। আইভী যদি দুর্নীতি করে থাকে, হত্যার সাথে জড়িত থাকে তার বিচার হবে। কিন্তু কখনো হত্যা, চাঁদাবাজি- এ সবের অভিযোগ তার শত্রুরাও তার বিরুদ্ধে কখনো করেনি। তবে হাঁ তিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। এই অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রয়েছে। হাসিনার দলের সাথে যুক্ত থেকে যারা লাশের পর লাশ ফেলেছেন, মানুষের জায়গা-জমি দখল করেছেন, চাঁদাবাজি করেছেন, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। তাদের কেশাগ্রও এই সরকার স্পর্শ করেনি বা করতে চায়নি। তাদের নিরাপত্তা দিয়ে সসম্মানে দেশ থেকে বের হয়ে যেতে দিয়েছেন। যারা বিদেশে গিয়ে এখন রাজার হালে জীবনযাপন করছেন। খুনি, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী যারা পালিয়ে যায়নি তাদের অনেকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে ঢুকে এখন নতুন সাম্রাজ্য তৈরি করছে।’
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিচারহীনতার বিরুদ্ধে গত ষোল বছর বলেছি কিন্তু কাজ হয়নি। শেখ হাসিনার গোয়ার্তুমী ও মাফিয়া লালন থেকে দেশ বের হয়নি। আমরা এখন আর বিচারহীনতা দেখতে চাই না। অপরাধী হলে বিচারের আওতায় আসবে কিন্তু অপরাধ না করে শাস্তি পাওয়ার সংস্কৃতি আমরা মানবো না। আইভী অবশ্যই ন্যায় বিচার পাবে, সরকার ও রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে।’
Comments