Image description

স্কুল থেকে একটি ফোন কল "আপনার ছেলের দুর্ঘটনা হয়েছে, দ্রুত হাসপাতালে আসুন।" ছুটে গিয়ে দেখলেন—চেহারা পুড়ে যাওয়া, শরীর আগুনে ঝলসে যাওয়া এক বাচ্চা। চোখে-মুখে যন্ত্রণার ছাপ। বারবার বলছিল, “আম্মু, একটু পানি খাওয়াও…” তবু মা জুলেখা বেগম ছেলেকে শেষবারের মতো এক ফোঁটা পানিও খাওয়াতে পারলেন না।

এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের বুকফাটা কষ্টের কথা বলছিলেন বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ১৩ বছর বয়সী শিশু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ছামীম এর মা।

সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা। শিক্ষার্থীদের ছুটি শেষে ফেরার মুহূর্তে হঠাৎই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয় স্কুল ভবনে। মুহূর্তেই চারদিকে ধোঁয়া, আগুন আর কান্নার আর্তনাদ। ঘটনাস্থলে বহু শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক আহত হন। ছামীম গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে, কিন্তু রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

নিহত ছামীমের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার সখিপুর উপজেলার ডিএমখালি ইউনিয়নের মাঝিকান্দি গ্রামে। তার বাবা কালিমউদ্দিন মাঝি সৌদি আরবে ব্যবসা করতেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সেখানেই তিনি মারা যান। ছামীম ও তার মা ৩ বছর আগে দেশে ফিরে আসেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছামীম ভর্তি হয় মাইলস্টোন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে।

মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় ডিএমখালি চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার পাশেই তাকে শায়িত করা হয়। শিশুটির মৃত্যুতে তার গ্রামে এবং পুরো শরীয়তপুর জেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

মা চেয়েছিলেন ছেলেকে বাঁচাতে, কিন্তু ছেলেটি শেষ নিঃশ্বাসে শুধু বলেছিল ‘আম্মু, একটু পানি খাওয়াও’…
আর সেই অনুরোধটাই আজ কাঁদাচ্ছে এক নিঃসঙ্গ মাকে, এক শোকস্তব্ধ জনপদকে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই ছিল স্কুলটির কোমলমতি শিক্ষার্থী।