Image description

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) কাগজে-কলমে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার এক বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম অবাধে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নাকের ডগায় ছাত্র সংগঠনগুলো নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করলেও প্রশাসন নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে।

গত বছর ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে ছাত্র ও পেশাজীবী সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার এক বছর না পেরোতেই ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় জোরালোভাবে শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে প্রশাসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জাতীয়তাবাদী কর্মচারী পরিষদ নামে একটি আহ্বায়ক কমিটি সম্প্রতি গঠন করা হয়েছে, যেখানে ড্রাইভার মামুন শেখ আহ্বায়ক এবং সিকিউরিটি গার্ড জাকির মৃধা সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গত ২৯ জুলাই ক্যাম্পাসের কীর্তনখোলা অডিটোরিয়ামে প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে কর্মী সম্মেলন আয়োজন করে। এ সময় অডিটোরিয়ামের কয়েকটি চেয়ার ভাঙার ঘটনাও ঘটে। রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদল নেতা মোশারফ হোসেন জীবনানন্দ দাশ কনফারেন্স হলের জন্য আবেদন করলেও প্রশাসন অনুমোদন না দেওয়ায় তারা জোরপূর্বক অডিটোরিয়াম ব্যবহার করে। এছাড়া ছাত্রদল ক্যাম্পাসে নবীন শিক্ষার্থীদের মাঝে কলম, ফুল ও বিএনপির ৩১ দফা দাবি সংবলিত লিফলেট বিতরণ, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে চিত্র প্রদর্শনী, বিজয় দিবসে র‍্যালি, বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।

ইসলামী ছাত্রশিবিরও সক্রিয়ভাবে ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাইকেল র‍্যালি, বৃক্ষরোপণ, মিলাদ মাহফিল, ইদুল আজহায় শিক্ষার্থীদের ভোজ এবং ভর্তি সহায়তা ডেস্ক বসিয়েছে। গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল গত ২২ জুলাই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গণভোটের আয়োজন করে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে টিএসসিতে একাধিক প্রোগ্রাম আয়োজন করেছে। এছাড়া এনসিপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পদপ্রত্যাশী রাশেদুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর গেটের সামনে বড় ব্যানার সাঁটিয়েছেন।

কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে দেওয়া হলেও ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় তারা হতাশ। তারা মনে করেন, প্রশাসনের নিরব ভূমিকা রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কাছে তাদের অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিষেধাজ্ঞা তুলে আইনি অনুমোদন নিয়ে সংগঠনগুলো কার্যক্রম চালাক।

শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আসিফ বিল্লাহ বলেন, “রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ছাত্র সংগঠনগুলো কীভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে? প্রশাসনের নিরব ভূমিকার সমালোচনা করে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানাচ্ছি।”

বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি মেহেদী হাসান সোহাগ বলেন, “বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও ক্যাম্পাসে অবাধে রাজনীতির চর্চা চলছে। ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ প্রশাসন নীরব। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাবেক আহ্বায়ক সুজয় বিশ্বাস শুভ বলেন, “ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে চায় এবং যারা করতে চায় না, উভয়ের জন্য সুযোগ নিশ্চিত করা উচিত। অগণতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ঠিক হয়নি।”

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্র রাজনীতির চর্চা থাকা উচিত। শিক্ষকদের অপরাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত প্রথমে। সৃজনশীল ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে গবেষণাবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে উঠবে।”

ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজা শরীফ বলেন, “শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্র রাজনীতি প্রয়োজন। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চা করছে ছাত্রদল।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, “ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যারা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে, তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন বলেন, “রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় এমন কার্যক্রমে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এ বিষয়ে প্রক্টর ও উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে হবে।”

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, “রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।