Image description

ঢাকার ধামরাইয়ে টিউবওয়েল পানির সঙ্গে নানা ধরনের কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শিশুদের জন্য নানা ধরনের আইসক্রিম ও কোমল পানীয় কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই নিজের বাড়ির ভাঙ্গা টিনের ঘরে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করছে বিভিন্ন নামের ভেজাল পানীয়। মোটা পাইপে ভরে পেপসি ও লিচুর স্বাদযুক্ত শিশুদের প্রিয় পানীয়। বিভিন্ন নামের পাইপগুলো দোকানের ফ্রিজে রেখে একটু শক্ত করে বিক্রি করছে। গরম বেশি পড়ায় তৃঞ্চার্ত শিশুরা ঔই নানা স্বাধযুক্ত কোমল পানীয় ক্রয় করে পান করছে। এই কোমল পানীয় তৈরি করা হচ্ছে প্রসিদ্ধ ব্র্যান্ডের কোমল পানীয় নামে। রাতের আঁধারে বা দিনে লোকচক্ষুর আড়ালে টিউবওয়েল থেকে পানি ও ১০/১২ প্রকারের কেমিক্যাল মিশিয়ে এই পন্য তৈরি করছে। বিভিন্ন গ্রামের মুদি দোকানী বা ফাস্ট ফোডের দোকানে বিক্রি করছে বলে জানা যায়। কিন্তু ঔই সব ব্যবসায়ীরা স্বনামধন্য ব্রান্ডের মনে করে ক্রয়ও করছে। এতে চরম ক্ষতি হচ্ছে ছোট শিশুসহ কোমল পানীয় যারা পাণ করছে সকল শ্রেণির মানুষের। 

এমন দৃশ্য চোখে পড়ে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের সাচনা গ্রামে মো: মোবারক হোসেনের বাড়িতে। তিনি নিজেই এই পণ্য তার দোকানে বিক্রি করে থাকে বলে মোবারক হোসেন জানান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সাচনা গ্রামে মোবারক হোসেন নামে এক অসাধু ব্যক্তির নিজ বাড়িতে নানা ধরনের নাম ব্যবহার করে এসব অবৈধ পণ্য তৈরি করছে। কোনো ধরনের মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই শুধু মাত্র টিউবওয়েলের পানি, সাদা পাওডার জাতীয় বস্তু এবং ১০/১২ ধরনের কেমিক্যাল ও বিভিন্ন ফুড কালার মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে স্বনামধন্য কোমল পানীয়ের নাম ব্যবহার করে লিচু ড্রিংকিং, রবু অরেঞ্জ, রবু লেমন, রবু স্ট্রবেরি, পেপসি ও রবু টাইগার। একটি মোড়কে এতগুলো নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে মিষ্টি দই ও ড্রিংকু নামে কোমল পানীয়। পলিথিনের কাগজে বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটে  ভরে তৈরি করা হচ্ছে এসব পণ্য। অপরদিকে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ৷ তৈরিকৃত এসব ক্ষতিকর মালামাল বিভিন্ন এলাকায় দোকানে দোকানে পৌছানোর জন্য মোবারক হোসেনের রয়েছে নিজস্ব ভ্যানগাড়ি। 

এলাকার লোকজনের কাছে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তারা এড়িয়ে যেতে থাকেন। 

অধিক মুনাফার আশায় প্রতারক মোবারক হোসেন লোকচক্ষুর আড়ালে গোপনে তৈরি করছে এসব পণ্য। সুগন্ধ ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয় বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রণ। পলিথিনের পাইপ ভরে মেশিন দ্বারা পলিথিনের মুখ বন্ধ করার জন্য রয়েছে একটি মেশিন। টিনের ঘরটির ভিতর কেউ প্রবেশ করতে পারে না। বেশ কয়েক বস্তা এসব কোমল পানীয় তৈরি করে একটি কক্ষের ভিতর মজুদ করে রাখা হয়েছে। 

বিএসটিআই'র অনুমোদন না থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে লোগো। কেমিস্ট ছাড়াই একজন নারী কর্মচারী ও কয়েক পুরুষ এবং মোবারক হোসেন মিলে তৈরি করেন এই ধরনের খাবার। ঘরটির ভিতর এমএস এন্টারপ্রাইজ এর নামে ম্যামো দেখা যায়। এতে  জানা যায় সপ্তাহে লক্ষ লক্ষ টাকার এসব অবৈধ কোমল পানীয় বিক্রি হচ্ছে। বাড়ির পাশে পৌছাতেই সাংবাদিক টের পেয়ে চলে যান পণ্য তৈরির কাজের লোকজন। 

অবৈধ কোমল পানীয়ের  কারখানার মালিক মোবারক হোসেনের কাছে এসব অবৈধ ও বিএসটিআই এর অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বলেন, সাভারের এক কাউন্সিলের কথা বলেন। তিনি এই কারখানার মালিক। আসলে তা নয়। মোবারক হোসেন নিজেই ওই ভেজাল কোমল পানীয় তৈরির কারখানার মালিক বলে স্বীকার করেন। ধামরাইয়ে রূপনগর এলাকায়  লাইভ কিচেন রেস্টুরেন্ট নামে আমার একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সেখানে এসব পণ্য বিক্রি হয়। শুধু কেমিক্যাল ও টিউবওয়েল এর পানি মিশিয়ে এই পণ্য তৈরি করা হয়। 

কোন বৈধ কাগজপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স আছে। কিন্তু তা দেখাতে পারে নি এবং পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব জিনিস সবাই খায়, কোন সমস্যা হয় না। 

তবে মোবারক হোসেনের ভয়ে এলাকার কেউ কোন কথা বলতে সাহস পায় না। তিনি মাদক কারবারের সাথে জড়িত এবং রুপনগর এলাকায় তার নিজের যে রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেখানে মাদক ও নারী ব্যবসা করে থাকেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান।

মোবারক হোসেনের বাড়ির পাশে সাচনা জামে মসজিদের ইমাম ইয়াসিনকে একাধিক বার জিজ্ঞেস করলেও প্রথমে তিনি এসব বিষয় জানেন না বলে জানান। পরে বলেন, এগুলো ক্ষতিকর। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বন্ধ করে দিলে ভালো হয়।

মোবারক হোসেনের বাড়িতে এই অবৈধ কোমল পানীয়ের কারখানা সম্পর্কে ঔই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পলানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমি কখনো কোন ট্রেড লাইসেন্স মোবারককে দেই নি। আমি তাকে ইউনিয়ন পরিষদে এ বিষয়ে ডাকবো এবং কারখানাটি বন্ধ করার ব্যবস্থা করবো। তা না হলে এলাকার সকল শিশু বাচ্চারা এসব জিনিস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে।

মোবারক হোসেনের কয়েকজন প্রতিবেশি বলেন, আপনারা আমাদের সাথে কথা বইলেন না। মোবারক খারাপ লোক। পরে আমাদের সমস্যা হবে। 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, এসব জিনিস মোবারকের বাড়িতে অনেক দিন ধরে বানায়। রাতের বেলা কোথায় যেন নিয়ে যায়। এই কথা বলেই চলে যান ঔই নারী। 

এ বিষয়ে ধামরাই উপজলো স্বাস্থ্য ও পরিবারব পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মঞ্জুর আল মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, অবৈধভাবে তৈরিকৃত পন্যগুলো সরাসরি শিশুদের লিভার, কিডনি সহ বিভিন্ন অঙ্গ-পতঙ্গে সরাসরি ক্ষতি করবে তাছাড়া প্রথমে পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হবে। পরে লিভার, কিডনিসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হবে। আমি আপনাদের মাধ্যমেই বিষয়টি জানতে পারলাম। অতিদ্রুত এধরনের অবৈধ কারখানা বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে৷