Image description

জাল-জালিয়াতি করে জোরপূর্বক জমি লিখিয়ে নেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে স্বদেশ স্বর্ণালী প্রপার্টিজের নামে। দেশের প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে সন্ত্রাসী বাহিনীর দাপটে অন্যের জমিতে জোরপূর্বক বালি ভরাট করা, কম দামে জমি লিখিয়ে নেয়াসহ সরকারি সড়ক, খাল, বিল, জলাশয় ও খাসজমি দখল করে প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে কাইয়ূম-ওয়াকিল-গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে। 

আওয়ামী লীগ আমলে এসব অপকর্ম সামলাতেন সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াকিল উদ্দিন। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকা উত্তরের চাঁদাবাজি, ভূমিদখল-জালিয়াতির দায়িত্ব নেয় কুখ্যাত সোনা চোরাকারবারি গোল্ডেন মনির ও বিএনপির নামধারী নেতা এম এ কাইয়ূম, যার হাত ধড়ে বিএনপির জোয়ারে নাও ভাসাচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। 

কাইয়ূমের শেল্টারে আওয়ামী চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। বিএনপির ইমেজ ডোবাতে যেন এক কাইয়ূমই যথেষ্ট। যারা একসময় আওয়ামী লীগ এমপি ওয়াকিল উদ্দিনের হয়ে কাজ করতো তাদের পালনকর্তা হয়ে উঠেছে বিএনপি নামধারী কাইয়ূম। স্বৈরাচার হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নে ওয়াকিল উদ্দিন ও এম এ কাইয়ূম একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।  

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কাইয়ূমের স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ খোদ রাজউক চেয়ারম্যান ও পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা। সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোনো প্রকার বৈধ অনুমোদন ছাড়াই রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় কাইয়ূম তৈরি করছে ছ (কিউ) হোটেল। এ যেন তার রামরাজত্ব, কাইয়ূমের স্বেচ্ছাচারিতা ও বল প্রয়োগের নমুনা এয়ারপোর্টের কাছাকাছি খিলক্ষেত এলাকায় নির্মাণাধীন বহুতল ছ (কিউ) হোটেল। যার অনুমোদন দেয়নি রাজউক, পরিবেশ ও পর্যটন অধিদপ্তর। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের পলাতক আসামিদের আশ্রয়দাতা কাইয়ূম নিজ পেশিশক্তি বাড়াতে চালাচ্ছে বিএনপির ত্যাগি নেতাকর্মীদের উপর দমনপীড়ন, চাপিয়ে দিচ্ছে মিথ্যা মামলা। যার কারণে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির ভোট ব্যাংকে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। 

কাইয়ূম-ওয়াকিলের দহরম মহরম: স্বদেশ প্রপার্টিজ লিমিটেডের পরিচালক থেকে কোটিপতি ওয়াকিল উদ্দিন। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ওয়াকিল উদ্দিন ইতিপূর্বে বৃহত্তর  গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি, বৃহত্তর গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি (১৯৭৪) এবং ছাত্রলীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য (১৯৬৯) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

পেশাগত জীবনে ওয়াকিল উদ্দিন স্বদেশ প্রপার্টিজ নামক একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। বিএনপি নেতা কাইয়ূম এই প্রতিষ্ঠানে অংশীদার হিসেবে আছেন- অনেকে অভিযোগ করলেও ওয়াকিল উদ্দিন জানান ২০১৪ সালে বিএনপি নেতা কাইয়ূম স্বদেশ প্রপার্টিজ-এর শেয়ার বিক্রি করে দেন। তাই বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে বিএনপির কোনো নেতার সংশ্লিষ্টতা নেই। 

গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্য মতে, ওয়াকিল উদ্দিন গুলশান থানা আওয়ামী লীগের নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর থাকাকালীন বসুন্ধরা সিটিতে ৫৪টি দোকান ক্রয় করেন, যার দাম ১২ কোটি টাকা। বারিধারাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার ছয়টি বাড়ি। গাজীপুরে রয়েছে চার বিঘা জমি, যার দাম ৩০ লাখ টাকা। গুলশান ১ নম্বর মার্কেটে একটি দোকান রয়েছে, যার দাম ৬০ লাখ টাকা। এছাড়াও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে তার এক কোটি পঁচাত্তর লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে, যার বর্তমান মূল্য ছয় কোটি টাকা। 

পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের ৫০ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে, যার বর্তমান মূল্য এক কোটি টাকা। স্বদেশ প্রপার্টিজের শেয়ার তিন কোটি ২০ লাখ টাকার- যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। কুড়িলে যমুনা পার্কের সঙ্গে আট কাঠা জমি রয়েছে। ওই জমির বর্তমান মূল্য দুই কোটি টাকা। নর্দা, জগন্নাথপুর, কালাচাঁদপুরে দুই বিঘা উঁচু জমি রয়েছে, যার মূল্যমান দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা। বসুন্ধরায় পাঁচ কাঠার দুটি প্লট রয়েছে, যার দাম দেড় কোটি টাকা। সব মিলিয়ে তার সম্পদের পরিমাণ ৪৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বদেশ প্রপার্টিজ নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন পাওয়ার চমকপ্রদ তথ্য। ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ছিল না। প্রতিষ্ঠানের ফাইলটি রাজউক থেকে পাস করে গণপূর্তে পাঠানো হয়। কমিশনের টানাপোড়েন নিয়ে ফাইলটা বেশ কিছুদিন ঝুলে ছিল। ফাইলটি পাস করাতে স্বদেশ প্রপার্টিজের অন্যতম মালিক সাবেক একজন মন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ’ লোকের শরণাপন্ন হন। তবে ফাইল পাস করাতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন তিনি। এরপর ফাইলটি পাস করানোর দায়িত্ব বর্তায় গোল্ডেন মনিরের ওপর। কারণ মনির স্বদেশ প্রপার্টিজের প্রায় ২১ শতাংশ শেয়ারের মালিক। বিএনপি সমর্থক সাবেক কাউন্সিলর একেএম কাইয়ুম কমিশনার স্বদেশ প্রপার্টিজের শেয়ার পুরোটাই মনিরের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এরপর বিদেশে পালিয়ে যান কাইয়ূম। 

সূত্রমতে, ২০১৮ সালে স্বদেশের ফাইল পাসের দায়িত্ব পাওয়ার পর গণপূর্তের এক বড় কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মনির। এক পর্যায়ে তিনি তাকে ঘুষের প্রস্তাব দেন। পরে ফাইলটি পাস করার বিনিময়ে ২৫ লাখ টাকা ওই কর্মকর্তার বাসায় পৌঁছে দেন মনির। জানা গেছে, একটি বড় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান পূর্বাচলে বড় জায়গা বরাদ্দ পাওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছে। 

মূলত রাজউক থেকে যে কোটায় তারা ওই জায়গাটি বরাদ্দ নিতে চান, তা সাধারণত সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার কথা। যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো জমি নেই, তারা এ রকম প্লট পেতে পারে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক প্লট হিসেবে ওই জায়গাটি পাইয়ে দিতে ওই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জোট বাঁধেন গোল্ডেন মনির। সব টেবিলের কর্মকর্তারা একমত হলেও এক বড় কর্মকর্তা ওই প্লট বরাদ্দে বাধা হয়ে দাঁড়ান। এরপর নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে ওই কর্মকর্তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন গোল্ডেন মনির। 

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভালো চেয়ার পাইয়ে দেয়া ও পদচ্যুত করতে নিজের প্রভাব ও অর্থ ব্যয় করতেন মনির। আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াকিল, শিক্ষিত স্বর্ণ চোরাকারবারি গোল্ডেন মনির এবং সুবিধাবাদী বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ূমের বেশিরভাগ অবৈধ টাকা বিনিয়োগ করা হয় এই স্বদেশ প্রপার্টিজে, তাদের পেশিশক্তি অন্যান অপরাধের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সুনাম বিনষ্টকারীরা এসে মিলিত হয় স্বদেশ প্রপার্টিজ নামক আঁতুড়ঘরে। মাফিয়া কাইয়ূমের দৌরাত্ম্য নিয়ে দৈনিক মানবকণ্ঠের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।