Image description

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা পাঁচ মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় যুক্ত করলেন বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা। কিন্তু সংকটের খবর হলো- দেশে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। প্রায় প্রকাশ্যেই ঘটছে অস্ত্রবাজি ও খুনাখুনি। প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে মাঝে মাঝেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে দুর্বৃত্তদের। তারা হামলে পড়ছে প্রতিপক্ষ কিংবা সাধারণ মানুষের ওপর। 

সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য ভেদ করা বুলেটে সাধারণ মানুষের নির্মম মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। আবার দুর্বৃত্তের অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে লিপ্ত হচ্ছে চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে। এদের অনেকেই পতিত সরকারের অনেক নেতার অধীনে কাজ করেছেন দীর্ঘ সময়। এটি শুধু রাজধানী বা জেলা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, মফস্বলেও ছড়িয়ে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, আধিপত্য বিস্তার, লুটপাট, চাঁদাবাজিসহ যে কোনো তুচ্ছ ঘটনায় অস্ত্রের ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা। সারা দেশেই প্রতিদিন হত্যা, হামলা, ভাঙচুর, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ঘটছে। মানুষ এসব কারণে স্বস্তিতে নেই। 

গত অক্টোবরেই দেশে ১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। যা খুবই উদ্বেগের। পুলিশ, হাসপাতাল ও মানবাধিকার সংস্থা এমএসএফের তথ্যে জানা যায়- বিগত সরকার পতনের পর গত তিন মাসে অন্তত ৭১৫ জনের বেশি মানুষ হত্যার শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ১১ হাজার। এর মধ্যে অক্টোবরে ৯১, আগস্টে ৫৪১ ও সেপ্টেম্বরে ৮৪ জন নিহত হন। এ ছাড়া গত তিন মাসে গণপিটুনিতে ৮৪ জন নিহত হন। এমন চিত্রই বলে দেয় দেশের মানুষ কত উদ্বেগের মধ্যে বাস করছেন!  

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন- ‘৫ আগস্টের পর পতিত সরকারের রেখে যাওয়া প্রশাসন যথাযথ কাজ করতে পারছে না। অন্তর্বর্তী সরকারও কঠিন বার্তা দিতে পারছে না। এর সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা।’ ফলে সমাজে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিগত সরকারের পতনের পর সারা দেশে চার শতাধিক থানা থেকে বিপুল পরিমাণ লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ অপরাধীদের হাতে হাতে। ফলে দেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

দুঃখজনক হলেও সত্য- পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা যায়, এখনো অনেক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে থানা থেকে লুট হওয়া বেশির ভাগ অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। সেসব অস্ত্রও সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। ইতিবাচক বার্তা হচ্ছেÑ পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যে জানা যায়, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া যৌথ বাহিনী অভিযানে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৩১৮টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৭৪ সন্ত্রাসী। তবে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করতে এটাই যথেষ্ট নয়। 

বাস্তবতা হলো- এসব অস্ত্র উদ্ধার করা না গেলে সংকট আরো ভয়াবহ হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যৌথ বাহিনীর অপারেশনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। নইলে পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। কারণ এর সুযোগ নেবে দেশি-বিদেশি নানা মহল। একটি বিষয় দুঃখজনক হলেও সত্য- সারাদেশে পুলিশ প্রশাসনের ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তিন মাসেও তাদের গতি ফেরেনি। এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে সারাদেশ। এসব সংকট নিরসনে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে ওঠার আগেই অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। 

বর্তমান নাজুক অবস্থায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সর্বপ্রথম অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। এ ছাড়া পুলিশ ইচ্ছা করলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবে না। সর্বোপরি দ্রুত এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা ও পুলিশ বাহিনীর অবকাঠামোগত সংস্কারই জননিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারেÑ এমনটাই প্রত্যাশা সবার।