
রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দেশবাসী মর্মাহত। জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাহনাজ খুশিকেও ছুঁয়ে গেছে শোক। সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন অনুভূতি।
নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার ধারণা, কোনো মানুষ কাল রাতে ঘুমাতে পারে নাই। সব মা-বাবা এবং অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ অসহায়ভাবে জেগে ছিল। সবার গলার কাছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কালো ধোঁয়া দলা পাকিয়ে আছে, সেটা না পারা যায় গিলতে, না পারা যায় সহ্য করতে!’
এরপর লেখেন, ‘ঢাকা শহরে সন্তান জন্ম দেওয়া মা-বাবা সবচেয়ে বড় অসহায়। কেউ কল্পনাও করতে পারে না সেই মা-বাবার সার্বক্ষণিক যুদ্ধ। এছাড়াও যে মা-বাবার অর্থনৈতিক হিসাব কষে চলতে হয়, রিকশা/সিএনজি/ বাসে চড়তে হয়, তাদের জীবন আরও দ্বিগুণ কঠিন।’
খুশির কথায়, ‘বাচ্চার জন্মের পর থেকেই ভাবতে হয়, কোন স্কুলে পড়াতে পারবো, কিভাবে ভর্তি করবো, বাসা সেখান থেকে কতটা দুরে, যাওয়া আসা কিভাবে হবে, উপার্জনের সাথে মিলবে কিনা সব ইত্যাদি বিশদভাবে। ভর্তি করতে পারলে এক রকম, না পারলে অন্য রকম কষ্ট। স্কুল, কোচিং বিজনেস, সামাজিকতা, ঘরকন্না সব মিলিয়ে জীবনের সব দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়। সন্তানের প্রয়োজনে তখন হয় মা বাবার সুর্যোদয়-সুর্যাস্ত। পিতামাতা হবার অপার স্বপ্নের আনন্দ স্কুল-কলেজ-কোচিং এর টাকা গুনতে গুনতে ঝাপসা হয়ে যায়।’
অভিনেত্রী লেখেন, সব মা-বাবারই যুদ্ধ করতে হয়, কিন্তু ঢাকা শহরের মা বাবার জীবনে সন্তান ছাড়া কোন স্পেস নাই। তাদের নানান দুর্ভাবনার মধ্যে কিছুক্ষণের ভাবনার থেকে মুক্তির জায়গা স্কুল। সেখানে বাচ্চাদের দিয়েই কেউ কাজে যায়, বাজারে যায়, ঘড়ির কাঁটার সাথে দৌড়ে সব দায়িত্ব শেষ করার চেষ্টা করে, অতঃপর আবার দৌড়ে স্কুলে-কোচিংয়ে যায়…….।
সবশেষে খুশি লিখেছেন, ‘এ বাঁচার মানে কেউ বুঝবে না! কেউ জানে না মা-বাবার সন্তানই কোন পুর্নতা-কি অপার শূন্যতা! অল্প কিছুদিনে মধ্যে বরাবরের মতোই সবাই সব ভুলে যাবে, স্বাভাবিকভাবেই চলবে সব। শুধু মা বাবার বুকেই জ্বলবে এ আগুন আমৃত্যু- মাইলস্টোন স্কুলের ধোঁয়া তাদের নিঃশ্বাস-চোখ থেকে কোনওদিন সরবে না!আহা রে আমাদের কলিজা ছেঁড়া ধন! হায় রে আমাদের মা-বাবার হবার আজন্ম অসহায়ত্ব!’
সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমান বাহিনীর ‘এফ-৭ বিজিআই’ মডেলের একটি বিমান উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের একটি ভবনে আছড়ে পড়ে। প্রচণ্ড শব্দ আর আগুনের গোলায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ক্লাস চলাকালীন দুর্ঘটনা ঘটায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দেয় ব্যাপক বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক।
দুর্ঘটনার সময় কলেজে প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণির ক্লাস চলছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ ও আগুনে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ে, কেউ শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। সবশেষ খবর অনুযায়ী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ এবং চিকিৎসাধীন শতাধিক।
Comments