
জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘জামায়াত-এনসিপির সরকার’ হিসেবে অভিহিত করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন পেছানোর মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে চায় এবং জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মতো দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার পাঁয়তারা করছে। সম্প্রতি একটি টক শোতে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
জামায়াতের নীরবতা ও নিষিদ্ধকরণের প্রচেষ্টা
শামীম পাটোয়ারী বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি উঠলে জামায়াত কোনো প্রতিবাদ করেনি, যা দুঃখজনক। কিন্তু জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে জামায়াত স্পষ্টভাবে কথা বলছে।” তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় পার্টি সবসময় জামায়াতের নিষিদ্ধকরণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। “১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের আমলে জামায়াত প্রথম নির্বাচনে অংশ নেয়। জাতীয় পার্টি কখনো জামায়াতের নিষিদ্ধকরণের পক্ষে কথা বলেনি। এমনকি গত বছর শেখ হাসিনার সরকারের শেষ সময়ে জামায়াত নিষিদ্ধ হলে জিএম কাদের স্পষ্ট বলেছিলেন, এভাবে কোনো দল নিষিদ্ধ করা যায় না,” বলেন তিনি।
গণতন্ত্রের নামে স্বৈরাচারী আচরণ
শামীম পাটোয়ারী গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “গণতন্ত্র মানে এটা নয় যে সাতটি দল মিলে দুটি দলকে নিষিদ্ধ করে ভোটের আসন ভাগ করে নেবে। গণতন্ত্র মানে জনগণ নির্বাচনে তাদের সিদ্ধান্ত দেবে। নির্বাচনের আগে ফলাফল নির্ধারণ করার চেষ্টা স্বৈরাচারী আচরণ।” তিনি অতীতের ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোর উদাহরণ দিয়ে বলেন, “এই নির্বাচনগুলোর ফলাফল আগে থেকে নির্ধারিত ছিল, যার বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদ করেছে। নতুন শাসনব্যবস্থা এলেও যদি কেউ নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে এবং জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ বা জাসদের মতো দলগুলোকে বাদ দেয়, তাহলে ভোট কীভাবে হবে?”
জামায়াতের শক্তিশালী অবস্থান
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াতের অবস্থানকে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেন শামীম পাটোয়ারী। তিনি বলেন, “জামায়াত এখন তাদের ৫৪-৫৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তাদের দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। শক্তিশালী অবস্থান মানে এটা নয় যে অন্য দলকে নিষিদ্ধ করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া।” তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার জামায়াত ও এনসিপির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। “এই সরকার জামায়াতের সরকার, এনসিপির সরকার। নিজেদের সরকারের বিরুদ্ধে কেউ আন্দোলন করে না। তাদের ভিসি, ডিসি, ছাত্র সংসদে ভোট—সবকিছুতেই তারা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।”
নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা
শামীম পাটোয়ারী মনে করেন, জামায়াত নির্বাচন পেছানোর মাধ্যমে তাদের প্রভাব আরও বাড়াতে চায়। তিনি বলেন, “নির্বাচন যত দেরি হবে, জামায়াত তত তাদের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করতে পারবে। তারা সুকৌশলে চাঁদাবাজির মতো বিষয় থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে। তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচন পেছানো এবং অন্য দল নিষিদ্ধ করে ভোটের পরিবেশ নষ্ট করা।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, জামায়াত বিএনপিকে চাপে রাখতে এবং নির্বাচনের ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করতে এই কৌশল অবলম্বন করছে।
রাজনৈতিক প্রভাব ও আলোচনা
শামীম পাটোয়ারীর এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তার এই মন্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। জামায়াতের প্রভাব এবং নির্বাচন পেছানোর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে।
Comments