
ইসলামে দেনমোহর কেবল একটি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং এটি নারীর সম্মান ও অধিকারের প্রতীক। এটি স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর জন্য একটি আর্থিক উপহার, যা নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে দেনমোহরের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ইসলাম বৈবাহিক সম্পর্ককে কেবল একটি বন্ধন হিসেবে নয়, বরং নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদার ৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, দেনমোহর পরিশোধ করে নারীকে বিবাহ করা বৈধ। এটি নারীর একটি সম্পূর্ণ অধিকার, যা কোনোভাবেই খর্ব করা যাবে না। মোহরের মূল উদ্দেশ্য, নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া এবং তাকে মর্যাদার সঙ্গে স্বামীর ঘরে আনা। এ কারণে মোহরের পরিমাণ এমনভাবে নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে, যা নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করে, কিন্তু একই সাথে স্বামীর সামর্থ্যের বাইরে না যায় সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। তবে ইসলামে মোহরে ফাতেমিকে গুরুতবপূর্ণ মনে করা হয়।
নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা (রা.)-কে হযরত আলি (রা.)-এর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার সময় যে দেনমোহর নির্ধারণ করেছিলেন, তাকেই মোহরে ফাতেমি বলা হয়। হযরত ফাতিমা (রা.) ও হযরত আলি (রা.)-এর বিয়েতে মোহর হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০০ দিরহাম। আধুনিক হিসেবে, এটি ১৩১.২৫ তোলা বা ১.৫৩০৯ কিলোগ্রাম রূপার সমান।
তবে ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, বিয়েতে সর্বনিম্ন দেনমোহর হলো ১০ দিরহাম। এক দিরহামের ওজন হলো ৩.০৬১৮ গ্রাম, তাই ১০ দিরহামের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০.৬১৮ গ্রাম রূপা। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “১০ দিরহামের কম কোনো দেনমোহর নেই।” (বায়হাকি শরীফ, ৭/২৪০)। যদি কোনো স্ত্রী সর্বনিম্ন পরিমাণের চেয়ে কম মোহর নির্ধারণে রাজি হন, তাহলেও তা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না।
ইসলাম দেনমোহর নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “সাবধান, তোমরা নারীদের মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। যদি মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা দুনিয়াতে সম্মানের বিষয় হত কিংবা মহান আল্লাহর কাছে তাকওয়া হত, তাহলে তোমাদের নবী তা করতেন।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১১১৪)।
Comments