Image description

তিস্তা সেচ এলাকায় চাষাবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেচ খালগুলোর সংস্কার কাজে সামাজিক বনায়নের প্রায় ৪ লাখ বৃক্ষ নিধনের প্রক্রিয়া চলছে। এতে মরুকরণের প্রাকৃতিক বির্পযয়সহ জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে জনসাধারণ ও পরিবেশবিদরা।
জানা যায়, তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফসল উৎপাদনে সেচের পানি নিশ্চিত করতে ২০২১ সালে ‘তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প হাতে নেয় সংশ্লিষ্টরা। পরে ২০২২ সালের ২২ এপ্রিল তৃতীয় দফায় ভার্চুয়াল আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হয় এ প্রকল্পের রূপরেখা। ১ হাজার ৪৫২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ভার পড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওপর। 
দায়িত্ব পেয়ে ওই বছরই তড়িঘড়ি করে তাদের সব খাল ও ক্যানেলের সংস্কার কাজ শুরু করে পাউবো। যার মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় আছে ৭৬৬.৩১ কিলোমিটার ‘ডাইক’ পুনবার্সন ও শক্তিশালীকরণ, ৭২ কিলোমিটার সেচ পাইপ স্থাপন, ১০ দশমিক ০৮ কিলোমিটার প্রটেকশন বাঁধ নির্মাণ ও ১.০৬ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার। সঙ্গে বাইপাস সেচ খাল নির্মাণ করা হবে ৭ দশমিক ১৩ কিলোমিটার। এ ছাড়া পরিকল্পনা অনুসারে ২৭টি কালভার্ট, ৪টি সেতু নির্মাণ ও ২৭০ হেক্টর জলাধার ও সাড়ে নয় কিলোমিটারের চ্যানেল পুনঃখনন, ৬ কিলোমিটার পরিদর্শন, ৫২.২৯ কিলোমিটার পরিদর্শন সড়ক নির্মাণ ও মেরামত, ৫৭টি নিকাশ কাঠামো নির্মাণ ও ৩টি মেরামত, ২০টি রেগুলেটর নির্মাণ ও ৬টি রেগুলেটর মেরামত এবং ১৮টি অনাবাসিক ভবন মেরামতের পর রোপণ করতে হবে ৮৭ হাজার গাছ।
তবে প্রকল্প সফল করতে ওই সব খাল ও ক্যানেলে বিদ্যমান সামাজিক বনায়নের প্রায় ৪ লাখ বৃক্ষ অপসারণ করতে হচ্ছে বন বিভাগকে। আর বিশাল সংখ্যক বৃক্ষরাজি ধ্বংস করায় উত্তরের এ জনপদে চলতি মৌসুমেই প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কৃষিতে পানি সরবরাহ বৃদ্ধির নামে বিশাল এলাকাজুড়ে সামাজিক বনায়নের বৃক্ষরাজি ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মতলুবুর রহমান জানান, ‘কৃষিতে ফলন বাড়ানোর লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই প্রকল্পের গাছগুলো সরাতে হচ্ছে। তবে এভাবে গাছ নষ্ট করার বিষয়ে চিন্তায় আছি। যদিও বিশাল এ বনায়নের গাছ অপসারণের পর আবারও লাগানো হবে। কিন্তু তা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। এতে প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়লেও করার কিছুই নেই।’ 
অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নে সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন। কিন্তু কোনো কিছুই মানতে চায় না পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞে বাঁধে প্রায় লক্ষাধিক গাছ কাটার পরিকল্পনা করেছে। 
ওই বনায়নের উপকারভোগী দলের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, গাছগুলো খাল থেকে অনেক দূরে। এমনকি বাঁধের এক কিনারে। পাউবোর খনন ও বাঁধ পুনর্নির্মাণ কাজে কোনো সমস্যা হতো না। তার পরও এ গাছগুলো অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এভাবে গাছ ধ্বংসের নির্দেশদাতারা দেশপ্রেমিক হতে পারে না। পাউবো কর্তারা শুধু পকেট ভারী করতে পানি উন্নয়নের নামে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হাকিম বলেন, প্রতি বছর উত্তরাঞ্চলে গ্রীষ্মকালে উষ্ণতা বাড়ছে। গত বছর গড় তাপমাত্রা ছিল সর্বনিম্ন ৩৫ ও সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচণ্ড দাবদাহ পুড়েছিল উত্তরাঞ্চল। এমন পরিস্থিতে বিশাল এলাকার সবুজ বৃক্ষ কর্তন করা হলে আগামীতে এ অঞ্চলে মরুকরণের আশঙ্কা রয়েছে। তাই এখনই সচেতন হওয়া উচিত। 
উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সৈয়দপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন খোকন বলেন, ভূপৃষ্ঠে ৩০ শতাংশ বনভূমি বা বনাঞ্চল প্রয়োজন। গাছই হচ্ছে ধরণীর ফুসফুস। গাছ থেকে অক্সিজেনের পাশাপাশি এর ছায়া মাটিকে আর্দ্র ও চারপাশের পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখে। তাই বৃক্ষ নিধন হলে আর্দ্রতা কমে শুকিয়ে যায় পরিবেশ। বিপর্যয় ঘটে প্রকৃতির। যার কারণে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়। প্রকৃতি ও মানবকল্যাণে অবিচারে বৃক্ষ নিধন কোনোমতেই উচিত নয়। সরকারকে ধোঁয়াশায় রেখে এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। 
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মরু অঞ্চলে বরফ গলার কারণে নতুন নতুন অণুজীব অবমুক্ত হয়ে সংক্রামক ব্যাধি বাড়ছে। তাই বৃক্ষ নিধন প্রাণীদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলতে পারে। গাছ ধ্বংস করলে এর মধ্যে বসবাসকারী প্রাণীদের ব্যাধি মানবদেহে সংক্রমিত হবে। যার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব।ইউনিভার্সিটি অব মাতো গ্রাসোর ইকোলজিস্ট আনা লুসিয়ের মতে, কোনো নতুন ভাইরাস প্রাকৃতিক আবাস ত্যাগ করলে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। এতে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।