Image description

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার সতর্ক করে বলেছেন, ১৯৭২ সালের সংবিধান অপরিবর্তিত রাখা হলে এবং সংস্কারের পথে বাধা দেওয়া হলে বাংলাদেশে আবারও গণ-অভ্যুত্থান ঘটবে। সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

সারোয়ার তুষার বলেন, “এই ‘৭২-এর সংবিধান আপনারা যদি টিকিয়ে রাখেন, এই সংস্কারকে আবারও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার ভেতরে ঢোকাতে চান, আবারও বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান ঘটবে—যদি এই সংবিধান আপনারা বদলাতে না দেন।” তিনি আরও বলেন, “এই সংবিধানের ভেতরেই গণ-অভ্যুত্থান ঘটার সব শর্ত রয়ে গেছে। এই সংবিধানই এক ব্যক্তিকে প্রেসিডেনশিয়াল সিস্টেম থেকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সিস্টেমে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছে।”

তিনি বর্তমান সংবিধানকে “মরহুম সংবিধান” আখ্যা দিয়ে বলেন, “এই মুহূর্তে যে বাহাত্তরের সংবিধানটা আছে, এটা একটা মরহুম সংবিধান। কিন্তু আমাদের দেশের স্টাবলিশমেন্ট এটা রাখবেই। রাজা মারা গেছেন, কিন্তু তাঁর মমিটা দেখিয়ে বলা হবে, এটা জীবিত আছে। এই সংবিধান আর নাই।” তিনি আরও যোগ করেন, “প্রধানমন্ত্রীর মধ্য দিয়ে একটা সংসদীয় স্বৈরতন্ত্র এখানে কায়েম হয়েছে। এখানে কোনো গণতন্ত্র কায়েম হয়নি। আমরা একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান চাই।”

বর্তমান সরকারের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে সারোয়ার তুষার সংবিধানের ১০৬ ধারার উল্লেখ করে বলেন, “বর্তমান সরকার সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে—এটা ধাপ্পাবাজি। গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে বাংলাদেশে, এটার পরে সরকার গঠন করা যাবে কি না সেটার জন্য শেখ হাসিনার রাষ্ট্রপতি তাঁর প্রধান বিচারপতির কাছে রেফারেন্স পাঠাচ্ছেন, যে বিচারপতি তখন পলাতক। সেই রেফারেন্সের ভিত্তিতে এই সরকার গঠিত হয়েছে। মহা ধাপ্পাবাজি। এর চেয়ে বড় ধাপ্পাবাজি আর হতে পারে না।”

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, “সেই ১০৬-এর সার্টিফায়েড কপিটা কই, আমরা দেখতে চাই। কপিটা দেখান। আমাদের একটা ভীষণ বিপদের মধ্যে আপনারা নিয়ে যাচ্ছেন। যেকোনো মুহূর্তে যে কাউকে দিয়ে এই সরকারের আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলানো হবে। ১০৬-এর একটা বাধ্যবাধকতা আছে যে শুনানি হতে হবে। আপনারা কেউ শুনানির কথা শুনেছেন?”

সারোয়ার তুষার আরও বলেন, “যখন জুলাই সনদের বাস্তবায়নের কথা আসছে, তাঁরা আমাদের আবার আদালত দেখাচ্ছেন। ১০৬ দেখাচ্ছেন। ১০৬ একটা সাংবিধানিক ব্যাপার। সংবিধানের অধীন একটা বিষয় দিয়ে কীভাবে অতি সাংবিধানিক বিষয়ের ফয়সালা হতে পারে? ১০৬-এর মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ টেকানো যাবে না, পার্লামেন্টও টেকানো যাবে না।”

সারোয়ার তুষারের এই বক্তব্য বর্তমান সংবিধান নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাঁর মতে, একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন ছাড়া দেশে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব নয়।