Image description

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে সাম্প্রতিক সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট ঘিরে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে টানাপোড়েনের পর এই ইতিবাচক বার্তা কূটনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ট্রাম্প সম্প্রতি তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে মোদীকে ‘খুব ভালো বন্ধু’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে আলোচনা চলছে এবং তিনি আগামী সপ্তাহগুলোতে মোদীর সঙ্গে আলাপে আশাবাদী। জবাবে মোদী এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং স্বাভাবিক অংশীদার। আমি আত্মবিশ্বাসী যে, আমাদের বাণিজ্য আলোচনা ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্বের অসীম সম্ভাবনা উন্মোচন করবে।”

শুল্ক বিতর্কের ছায়ায় সম্পর্ক

ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরেছিল। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের কটাক্ষও সম্পর্ককে আরও জটিল করেছিল। এর মধ্যে ভারত চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পোস্ট এবং মোদীর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সম্পর্ক মেরামতের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সামিটে ভারতের অবস্থান এবং জাপানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক ট্রাম্পের সুর নরম করতে ভূমিকা রেখেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ উপমন্যু বসু বলেন, “কূটনীতিতে কিছুই স্থায়ী নয়। ট্রাম্পের কূটনৈতিক পদ্ধতি প্রথাগত নয়, তবে ভারতের প্রতি তাঁর সাম্প্রতিক মনোভাব ইতিবাচক। তবে দিল্লির সতর্ক থাকা উচিত।” গীতাঞ্জলি সিনহা রায় মনে করেন, “ট্রাম্প ভারতবিরোধী নন। মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে দুই দেশের সহযোগিতা এর প্রমাণ।” তিনি এসসিও সামিট এবং জাপানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে ট্রাম্পের মনোভাব পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

বাণিজ্য আলোচনার ভবিষ্যৎ

সিএনবিসি-টিভি১৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কর্মকর্তারা সেপ্টেম্বরে সরাসরি বৈঠকের পরিকল্পনা করছেন। ২০২৪ সালে দুই দেশের বাণিজ্য ১২৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪৫.৮ বিলিয়ন ডলার। এই আলোচনার মাধ্যমে ঘাটতি কমানো এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্য নিয়েছে উভয় দেশ।

তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অর্থনীতিবিদ অজয় শ্রীবাস্তব মনে করেন, ভারত বড় শুল্ক সংকট এড়াতে পারলেও, খুঁটিনাটি বিষয়ে চ্যালেঞ্জ থাকবে।

সম্পর্কের ভবিষ্যৎ

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের একে অপরের প্রয়োজন। ভারতের বিশাল বাজার এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য, আবার ভারতের বাণিজ্য ও প্রযুক্তি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ট্রাম্পের অপ্রথাগত কূটনীতি এবং ভারতের বহুমুখী পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আপাতত, ট্রাম্প ও মোদীর সাম্প্রতিক বার্তা দুই দেশের মধ্যে বরফ গলার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে এই বন্ধুত্ব কতটা বাস্তবে রূপ নেবে, তা আগামী দিনের আলোচনার ওপর নির্ভর করছে।