Image description

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ইসদাইরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে পুলিশের তালিকাভুক্ত দূর্ধর্ষ শীর্ষ কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী নাহিয়ান আজম ইভান (২৫) নিহত হয়েছেন। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায় ওসমানী স্টেডিয়ামের সংলগ্ন স্থানে পরিকল্পিতভাবে ডেকে এনে ইভানকে ছুরিকাঘাত করা হয়। 

পরবর্তীতে রক্তাক্ত জখম অবস্থা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শহরের ৩'শ শয্যা খানপুর হাসপাতালে নেয়া হলে, অবস্থা অবনতি দেখা দিলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়, সেখানেই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত কিশোর গ্যাংয়ের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী  ইভান সদর উপজেলার ফতুল্লা থানাধীন ইসদাইর সুগন্ধা আবাসিক এলাকার জামাই বাবুর ছেলে। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইভানের বিরুদ্ধে হত্যা, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ইভটিজিং ও কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব প্রদান সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসি কর্মকান্ডের অভিযোগে ফতুল্লা থানাসহ বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। ইভান ইসদাইর ও সুগন্ধা এলাকায় চিহ্ন সন্ত্রাসী পুরো এলাকা তার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করত। স্কুল কলেজ পড়ুয়া মেয়ের ইভটিজিং সহ উত্যক্ত করাই ছিলো তার নেশা।  

উল্লেখ্য যে, ইয়াবা রাখার অভিযোগে ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর দুই সহযোগীসহ ইভানকে গ্রেপ্তার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। এরপর চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগে ২০২২ সালের ১১ মার্চ ৮ সহযোগী ও বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্রসহ ফের আটক হয় ইভান।
এর পরবর্তীতে আবারও ২০২২ সালের ১৯ মে ইভানকে গ্রেফতার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। সবশেষ ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৫ সহযোগীসহ ইভানকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-১১। 

এছাড়াও নিহত ইভান জাতীয় পার্টি থেকে চারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে গডফাদার খ্যাত আজমেরী ওসমানের ক্যাডার বাহিনী হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত ছিলো। তাকে আজমিরী ওসমান বাহিনী সক্রিয় সদস্য হিসেবে এলাকায় চাউর ছিলো। তার ভয়ে এলাকার কেউ কোনো বিষয়ে মূখ খুলতে রাজি হতেন না। সম্প্রতি সময়ে ইভান জোর করে এক পাশ্ববর্তী এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন।

ঘটনার সূত্রপাত, ইভানের সাথে ইসদাইর রেললাইন বস্তি এলাকার পাগলা সাইফুল, তার মেজো ভাই বাবু ও ছোট ভাই সফিকুল ইসলামের সাথে মাদক ব্যবসাসহ এলাকায় অধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিলো। এসব কর্মকান্ড নিয়ে তাদের মধ্যে একাধিককবার মারধর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সবশেষ গত এক মাস আগে চোর আখ্যা দিয়ে পাগলা সাইফুল ও তার দুই সহযোগীকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন এই কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী ইভান। এ ঘটনার পর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠে পাগলা সাইফুল ও তার সহযোগীরা। এরই ধারাবাহিকতায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) শরীফুল ইসলাম ইভান হত্যার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘নিহত ইভানের লাশ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করা হবে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

নিহত ইভানের বাবা বাবু ওরফে জামাই বাবু বলেন, আমার ছেলের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি দাবি করছি। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেই দাবি জানাচ্ছি।