নবীনগরের শিবপুরের পুণ্য মাটিতে সুরসম্রাটের স্মৃতির অবহেলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রাম,সেখানে ১৮৬২ সালের ৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন শাস্ত্রীয় সংগীতের বিশ্বখ্যাত সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। তিনি বলতেন, “সংগীত আমার জাতি, আর সুর আমার গোত্র।” ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের মাইহারে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি অনুরক্ত আলাউদ্দিন খাঁ মাত্র ১০ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাত্রাদলের সঙ্গে যুক্ত হন। পরে কলকাতায় গিয়ে প্রখ্যাত সংগীত সাধক গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য (নুলো গোপাল)-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। নুলো গোপাল তাকে একনাগাড়ে ১২ বছরের নিভৃতে সংগীত সাধনার শর্ত দেন, যা মেনে তিনি ‘মাইহার ঘরানা’ বা ‘আলাউদ্দিন ঘরানা’ প্রবর্তন করেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, সুরসম্রাটের জন্মভূমি শিবপুর এখনও অবহেলিত। বড় ভাই ফকির আফতাব উদ্দিন খাঁর পরিবারের বংশধর ইদ্রিস খান সপরিবারে ছোট দুটি টিনের ঘরে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, “প্রতিবছর জন্ম-মৃত্যুর দিনে অনেক গুণী মানুষ বাড়িতে আসে, কিন্তু ৫৩ বছর পরও সুরসম্রাটের স্মৃতি সংরক্ষণে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
তবে চার বছর আগে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার একরামুল সিদ্দিক উদ্যোগ নিয়ে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর বাবা-মায়ের বিধ্বস্ত কবর সংস্কার করেছিলেন।
সুরসম্রাটের ভ্রাতুষ্পুত্র ও সংগীত পরিচালক শেখ সাদী জানান, শিবপুরে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পরিবারের স্মৃতি সংরক্ষণের প্রকল্প নেওয়ার কথা বহুবার শোনা গেছে। বাস্তবে কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ে নি। বিশ্বখ্যাত এই শিল্পীর স্মৃতি সংরক্ষণে দেরি করা ঠিক নয়।
স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, ভারতসহ বিশ্বের বড় বড় সংগীতজ্ঞরা জন্মভূমি শিবপুরে আগ্রহী, কিন্তু রাস্তার দুর্ভোগজনক কারণে অনেকে আসতে আগ্রহী হন না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব চৌধুরী বলেন, আগামীকাল ৬ই সেপ্টেম্বর, শনিবার, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'র মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কোনো শোকসভার আয়োজন করা হচ্ছে না। তবে, ওস্তাদজির স্মৃতি সংরক্ষণে ‘ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ কালচারাল কমপ্লেক্স’ নির্মাণের একটি প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হবে।
জানা যায়, দেড়শত বছর অরক্ষিত ও অবহেলিত ছিল ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর বাবা-মায়ের কবর। সেখানে কুকুর ঘুমানোর ছবি দেখে সাবেক ইউএনও একরামুল সিদ্দিক সরাসরি শিবপুরে গিয়ে কবরগুলো সংস্কার করেন। তাঁর উদ্যোগে কবরগুলোকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় পুনঃস্থাপন করা হয় এবং নির্মাণ করা হয় সুরসম্রাটের কারুকার্য সম্বলিত একটি ভাস্কর্য।
বর্তমানে শিবপুরে জন্মভূমি, বাবা-মায়ের কবর, বড় ভাই ফকির আফতাব উদ্দিন খাঁর সমাধি এবং সুরসম্রাটের উদ্যোগে স্থাপিত মসজিদ ছাড়া তেমন কিছু নেই। এলাকা বাসীর উদ্যোগে স্থাপিত ‘সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ মহাবিদ্যালয়’ রয়েছে, তবে ‘ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীত জাদুঘর’ এখনও নির্মাণ হয়নি।
কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য কে.এম. মামুনুর রশিদ বলেন, “৫৩ বছরেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা চাই মহাবিদ্যালয় জাতীয়করণ হোক এবং তার নামে একটি মিউজিয়াম নির্মাণ করা হোক।”
প্রসঙ্গত, ১৯৫৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কুমারশীল মোড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন’, তবে ২০১৬ ও ২০২১ সালে বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
Comments