জলঢাকায় হলুদ সাংবাদিকে ছড়াছড়ি; পেশাদারিত্বের সংকটে সংবাদপত্র

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় হলুদ সাংবাদিকতার দাপটে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। পেশাদার সাংবাদিকতা হারিয়ে যাচ্ছে, ফলে পাঠকরা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত সংবাদ থেকে। সমাজের দর্পণ ও চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত সংবাদপত্রের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে কিছু অযোগ্য ব্যক্তির কারণে, যারা টাকার বিনিময়ে সাংবাদিক পরিচয়ে অপকর্মে লিপ্ত।
কিছু ভুঁইফোঁড় অনলাইন পোর্টাল ও পত্রিকা যাচাই-বাছাই ছাড়াই মাত্র পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকায় প্রতিনিধি নিয়োগ দিচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকে পূর্বে স মিলের শ্রমিক, বাসের হেলপার, রিকশাচালক বা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করছেন, এমনকি লাঞ্ছনা ও মারধরের ঘটনাও ঘটছে। ফলে পেশাদার সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের আস্থা কমছে।
এই উপজেলায় হাতে গোনা কয়েকজন পেশাদার সাংবাদিক থাকলেও হলুদ সাংবাদিকের সংখ্যা অগণিত। তারা নিজেদের সংগঠন গঠন করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের মতো পদে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন। রাজনৈতিক দল ও কিছু ভীতু সরকারি কর্মকর্তারা তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বৈধতা দিচ্ছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।
সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, “একটি মানববন্ধনে সমর্থকের চেয়ে সাংবাদিক বেশি ছিল, কিন্তু সংবাদ এসেছে মাত্র কয়েকটি মিডিয়ায়। এটাই প্রমাণ করে হলুদ সাংবাদিকের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। মানুষের জীবনের গল্প, ফিচার কে লেখে? পালিত-অনুষ্ঠিত খবর দিয়ে সাংবাদিক হওয়া যায় না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, “এরা ফেসবুকে বানান ভুলে স্ট্যাটাস দেয়, অথচ নিজেদের সাংবাদিক বলে। প্রকৃত সাংবাদিকদের আচরণে আমরা মুগ্ধ, কিন্তু এদের দাপটে অতিষ্ঠ।”
জলঢাকা প্রেসক্লাবের সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, “সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপের অভাবে এদের সংখ্যা বাড়ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সমাজের অবক্ষয় ঠেকানো যাবে না।”
বৈশাখী টিভির জেলা প্রতিনিধি ও জলঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলেন, “এদের অধিকাংশের কোনো পত্রিকা বা অনলাইন পোর্টাল নেই। ফেসবুকে মিডিয়ার নামে স্ট্যাটাস দিয়ে তারা অপকর্ম চালায়। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”
পেশাদার সাংবাদিকতার মান বাঁচাতে এবং হলুদ সাংবাদিকতা রোধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ ও সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
Comments