দিনাজপুরে বিনোদন কেন্দ্রে তৌহিদ জনতার ভাঙচুর, আগুন ও লুটপাটের অভিযোগ

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কাঞ্চন মোড়ে জনপ্রিয় বিনোদন পার্ক ‘জীবন মহল’-এ তৌহিদ জনতার ব্যানারে হাজারো লোকের উন্মত্ত হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার দুপুরে শুরু হওয়া এই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে পার্কের মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যার ক্ষতি অন্তত ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা। পুলিশের দেরিতে উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৭ আগস্টের একটি অভিযান থেকে। সেদিন দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পার্কে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে জেল দেয় এবং মালিককে ১ লাখ টাকা জরিমানা করে। এরপর বৃহস্পতিবার পার্ক মালিক আনোয়ার হোসেন জীবন চৌধুরীর অনুসারীরা প্রধান ফটকে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। কিন্তু একই সময়ে তৌহিদ জনতা জীবন চৌধুরীর গ্রেপ্তার দাবিতে বিক্ষোভ ডেকে লাঠিসোটা, ইটপাটকেল ও পাথর নিয়ে পিকআপে করে আসে। উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে তৌহিদ জনতার লোকজন পার্কে প্রবেশ করে মেডিটেশন সেন্টারে আগুন ধরিয়ে দেয়, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে এবং মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ৮-১০টি মোটরসাইকেলও ধ্বংস করা হয়।
পার্কের কাছেই পুলিশের পিকআপ থাকলেও তারা ঘণ্টাখানেক পরে এসে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর তৌহিদ জনতা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে, যাতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় তারা।
পার্ক মালিক আনোয়ার হোসেন জীবন চৌধুরী বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনে আমি প্রতিষ্ঠান চালাই। কিছুদিন আগে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযান হয়েছে, তারপর প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়। আজ ট্রাকে করে পাথর-লাঠি নিয়ে হামলা চালিয়েছে। পুলিশের সহায়তা চেয়েও পাইনি। পুরো প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে তাণ্ডব চালিয়েছে, ২ থেকে আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার জীবন হুমকিতে।”
তৌহিদ জনতার পক্ষ থেকে মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেন, “জীবন চৌধুরীর নেতৃত্বে দীর্ঘদিন অসামাজিক কাজ ও ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ চলছে। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু তার সন্ত্রাসীরা আমাদের ৭ জনকে আহত করেছে। বাধ্য হয়ে পাল্টা প্রতিরোধ করি।”
নাইমুর রহমান বলেন, “পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে জীবন চৌধুরীর লোকজন। আমরা প্রতিবাদ করেছি।”
মতিউর রহমান কাসেমী বলেন, “প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় দাবি উপস্থাপন করেছি, তারা পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছে।”
দিনাজপুর পুলিশ সুপার মারুফাত হোসেন মারুফ বলেন, “১৭ আগস্ট অভিযান হয়েছে, আটক ও জরিমানা করা হয়েছে। আজ উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আমরা শান্ত থাকার অনুরোধ করেছি। আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাইলে গ্রহণ করা হবে।”
জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, “ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ দুঃখজনক। উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছি। পরবর্তীতে গণ্যমান্য ব্যক্তি, প্রশাসন ও উভয়পক্ষের সঙ্গে বসে সমাধানের চেষ্টা করব।”
Comments