বাগেরহাটে ৪টি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে জেলাজুড়ে অবরোধ-হরতাল পালিত

বাগেরহাট জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ও সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি আজ (রোববার) সকাল ৮টা থেকেই শুরু হয়ে বিকাল ৪টা র্পযস্ত হয়েছে। পিকেটিংয়ের তীব্রতা এতো বেড়েছে, ভোরে কিছু গাড়ি রাস্তায় দেখা গেলেও সকাল ৯টার পর সড়ক-মহাসড়ক ফাঁকা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ করা গেছে।
অবরোধের সমর্থনে সড়কে বেঞ্চ, গাড়ি ও বড় গাছ দিয়ে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে সকাল থেকে জেলাজুড়ে সড়ক অবরোধ ও হরতাল পালিত হয়। এতে জেলার ভেতর ও বাইরের সড়ক যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
সকাল আটটা থেকে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের নওয়াপাড়া, কাটাখালি, কুদির বটতলা, মোল্লাহাট সেতু, বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়কের সাইনবোর্ড বাজার, খুলনা-মোংলা মহাসড়কের ফয়লা ও মোংলা বাসস্ট্যান্ডসহ অন্তত ১০টি স্থানে গাড়ি ও বেঞ্চ ফেলে অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা।
অবরোধের কারণে বাগেরহাটের সঙ্গে খুলনা, সাতক্ষীরা, ঢাকা, বরিশালসহ অন্যান্য জেলার সড়ক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে, অবরোধের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বাগেরহাট শহরের ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন রামপাল ও মোংলা উপজেলা নিয়ে গঠিত বাগেরহাট-৩ আসনটি ভেঙে বাগেরহাট-২ ও ৪ আসনের সঙ্গে যুক্ত করার খসড়া অনুমোদন দেয়। এ সিদ্ধান্তের পর স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। এর আগে বৃহস্পতিবারও একই দাবিতে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় মহাসড়ক অবরোধ করেছিল সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি।
বাগেরহাট সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির সদস্যসচিব ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘বাগেরহাটে চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে আমরা গেল ৩০ জুলাই তিনটি আসনের প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকেই আন্দোলন করে আসছি। কখনো সংবাদ সম্মেলন, কখনো রাজপথ অবরোধ, কখনো নির্বাচন অফিসে অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এরপরও নির্বাচন কমিশন তাদের প্রস্তাব থেকে সরে আসেনি।’
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম বলেন, ‘তাই আজকে সর্বত্র অবরোধ ও হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। জেলার সর্বস্তরের জনগণ আমাদের দাবির সপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কোনো দোকানপাট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেনি। মোংলা বন্দর এলাকার বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে। যান চলাচল বন্ধ। আশা করি, নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবি মেনে নেবে। না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
হরতাল ও অবরোধ সম্পর্কে সহকারী পুলিশ সুপার (ফকিরহাট সার্কেল) মো. রবিউল ইসলাম শামীম বলেন, ‘আমাদের কয়েকটি টহল টিম ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলার বিভিন্ন সড়কে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাটে চারটি আসন ছিল। ৩০ জুলাই দুপুরে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর পর থেকেই বাগেরহাট জেলাবাসী ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। একের পর এক কর্মসূচি দিতে থাকে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। এর অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল, জেলা প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে স্মারকলিপি, ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন এবং আজকের এই হরতাল। আসন কমানো অথবা বহাল রাখার বিষয়ে ২৫ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
Comments