
জান্নাত হলো আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামত ও চিরশান্তির ঠিকানা। এমন এক স্থান, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো হৃদয় কল্পনাও করতে পারেনি। আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র কোরআনে বলেছেন, "কোনো ব্যক্তি জানে না এরূপ (নেককার) লোকদের জন্য তাদের কর্মফলস্বরূপ চোখ জুড়ানোর কত কি উপকরণ লুকিয়ে রাখা হয়েছে।" (সুরা সাজদা: ১৭)
জান্নাত কেবল ইমান ও নেক আমলের পুরস্কার নয় বরং সেখানে আল্লাহ নিজেই মেহমানদারির ব্যবস্থা করবেন। কোরআনে বলা হয়েছে, "এটা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু (আল্লাহর) পক্ষ থেকে আতিথেয়তা স্বরূপ।" (সুরা হা-মিম সাজদা: ৩০-৩২)
সকল মুমিনেরই প্রত্যাশা জান্নাত লাভ করা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর উম্মতকে এমন ছয়টি আমলের কথা বলেছেন যা পালন করলে তিনি নিজে জান্নাতের জিম্মাদার হবেন। এই ছয়টি আমল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শান্তি, শৃঙ্খলা এবং সততা নিশ্চিত করে।
জান্নাতের নিশ্চয়তা দেয় যে ছয়টি আমল:
১. কথা বলার সময় সত্য বলা: সত্যবাদিতা হলো মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মিথ্যা থেকে দূরে থাকা এবং প্রতিটি কথায় সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা ইমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
২. অঙ্গীকার পূরণ করা: কাউকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা ইমানের দাবি। অঙ্গীকার ভঙ্গ করা মুনাফিকের লক্ষণ। তাই প্রতিটি অঙ্গীকার পালনে যত্নবান হওয়া উচিত।
৩. আমানত রক্ষা করা: কোনো আমানত (বিশ্বাস, সম্পদ বা দায়িত্ব) গ্রহণ করলে তা সঠিকভাবে এবং বিশ্বস্ততার সঙ্গে ফিরিয়ে দেওয়া বা পালন করা অপরিহার্য।
৪. যৌনাঙ্গ হেফাজত করা: ব্যভিচার ও অশ্লীলতা থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং পবিত্রতা বজায় রাখা ইমানের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
৫. দৃষ্টি সংযত রাখা: অপ্রয়োজনীয় ও অশ্লীল দৃশ্য থেকে চোখকে ফিরিয়ে রাখা আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
৬. হাতকে বিরত রাখা (কাউকে কষ্ট না দেওয়া): শারীরিক বা মানসিক কোনোভাবেই অন্যকে আঘাত না করা বা কষ্ট না দেওয়া একজন মুমিনের দায়িত্ব। হাত দিয়ে কাউকে আঘাত করা, চুরি করা বা কোনো ধরনের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, "তোমরা নিজেদের ছয়টি বিষয়ের জিম্মাদার হও, আমি তোমাদের জান্নাতের জিম্মাদার হব। যখন তোমরা কথা বলবে, সত্য বলবে; কোনো অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করবে; আমানত গ্রহণ করলে তা যথাযথভাবে আদায় করবে; যৌনাঙ্গের হেফাজত করবে; দৃষ্টি সংযত রাখবে এবং তোমাদের হাত কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত রাখবে।" (মুসনাদে আহমদ: ৮২)
এই ছয়টি আমল ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক জীবনেও শান্তি ও শৃঙ্খলা বয়ে আনে। এই আমলগুলো পালন করলে একজন ব্যক্তি যেমন জান্নাতের পথে এগিয়ে যেতে পারে, তেমনি একটি সুন্দর ও আদর্শ সমাজ গঠনেও তা সহায়ক হয়।
Comments