সাইকেল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার সেলিব্রিটি কমেডিয়ান ফারুক

একসময় গ্রামে গ্রামে ঘুরে ধান কিনে সাইকেলে করে বাজারে বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মেটাতেন ফারুক মিয়া। সেই ফারুক মিয়াই আজ ভাটি বাংলার জনপ্রিয় কমেডিয়ান হিসেবে পরিচিত, যার ফেসবুক পেজ “FARUK77778” দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশিদের মনেও আনন্দ ছড়াচ্ছে। তার ফানি ভিডিওগুলো ছোট-বড় সবার মনে আনন্দের জোয়ার এনে দিয়েছে, যা তাকে সোশ্যাল মিডিয়ার এক উজ্জ্বল নক্ষত্রে পরিণত করেছে।
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার ফকিরের বাজার এলাকার চাকুয়া গ্রামের মঞ্জিল মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া। প্রাইমারি শিক্ষার গণ্ডি পেরোতে না পারলেও তার প্রতিভা ও অধ্যবসায় তাকে আজ এনে দিয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। ২০২৩ সালে শখের বশে ফেসবুকে টিকটক ভিডিও আপলোড শুরু করেন ফারুক। পরবর্তীতে এই ভিডিওগুলো তার ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা শুরু করেন। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে তার ফানি ভিডিওগুলো দর্শকদের মন জয় করতে শুরু করে। বিশেষ করে তার অভিনয়ে অঙ্গভঙ্গি ও কৌতুকপূর্ণ উপস্থাপনা সব বয়সের দর্শকদের মুগ্ধ করে।
ফারুকের ফেসবুক পেজে বর্তমানে ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ২ মিলিয়ন (১৯ লাখের বেশি)। তার প্রতিটি ভিডিও অনায়াসে ১০ থেকে ২০ মিলিয়ন ভিউ অর্জন করে। কিছু ভিডিও এমনকি ১০০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ভিউ পেয়েছে, যা তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ। শুরুর দিকে এলাকাবাসীর সমালোচনা ও হাসাহাসির মুখোমুখি হলেও এখন তিনি সেই সমালোচকদের কাছেও প্রিয় ব্যক্তিত্ব।
ফারুকের সাফল্য শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তার প্রভাবে বারহাট্টার ১০-১২ জন যুবক তার সঙ্গে কনটেন্ট তৈরি শুরু করেছেন। ফারুক তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন, যা তাকে এলাকার একজন অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।
ব্যক্তিগত জীবনে ফারুক দুই সন্তানের জনক। বাবা, মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি সুখের সংসার গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তার ফেসবুক পেজের আয় দিয়ে সংসারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি তিনি মাদ্রাসা, মসজিদ এবং অসহায় পরিবারগুলোর জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভবিষ্যতে পেজের আয় বৃদ্ধি পেলে সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য আরও বেশি কিছু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ফারুক।
“আমার ভিডিওগুলো মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। আমি চাই, আমার কাজ দিয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে,” বলেন কমেডিয়ান ফারুক। তার এই যাত্রা শুধু বিনোদনই নয়, বরং একজন সাধারণ মানুষের স্বপ্ন পূরণের গল্প, যা ভাটি বাংলার প্রতিটি তরুণের জন্য এক অনুপ্রেরণা।
Comments