
মানিকগঞ্জে নিষিদ্ধ কীটনাশকের ব্যবহারে কৃষকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ (বারসিক)। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকালে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব’ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য উঠে আসে।
বারসিকের দুই মাসব্যাপী মাঠপর্যায়ের গবেষণা সমীক্ষায় মানিকগঞ্জ সদর, ঘিওর, হরিরামপুর ও সিংগাইর উপজেলার ২১ জন কৃষকের ওপর নির্দিষ্ট প্রশ্নমালার ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই চার উপজেলার ২১ জন কৃষকের মধ্যে ১৮ জনই নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা গত কয়েক বছরে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বারসিক কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, নিষিদ্ধ কীটনাশক যেমন কার্বোফুরান, প্যারাকোয়াট, গ্লাইফোসেট ও এলুমিনিয়াম ফসফাইড বাজারে ভিন্ন নামে বিক্রি হচ্ছে। এগুলো সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও সহজলভ্য। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এক মৌসুমে কৃষকদের কীটনাশক ক্রয়ে গড়ে ২৬,৭৫৭ টাকা ব্যয় হয়েছে। এসব কীটনাশক ব্যবহারে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ১০টি গরু, ১১টি হাঁস ও একটি পুকুরের মাছ মারা গেছে, যার আনুমানিক আর্থিক ক্ষতি ১১,৮৮,৫০০ টাকা। শুধুমাত্র সিংগাইরের রাজনগরে ৫০ বিঘাসহ মোট ৮৭ বিঘা জমিতে অতি বিপজ্জনক কীটনাশক ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে।
কৃষকরা মাথাব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, দুর্বলতা, উচ্চ রক্তচাপ, বিষণ্নতা, শ্বাসকষ্ট, ত্বকের রোগ, খিঁচুনি, অজ্ঞান হওয়া, ঘুমের সমস্যা ও বুকের ব্যথার মতো উপসর্গের কথা জানিয়েছেন। ঘরোয়া ও প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হলেও এজন্য তাঁদের গড়ে ১১,০০ৰ টাকা ব্যয় হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, কৃষকদের অসচেতনতা, নিষিদ্ধ কীটনাশকের অবাধ বিক্রি, বাজার মনিটরিংয়ের ঘাটতি এবং কীটনাশক ব্যবহারের সঠিক নির্দেশনার অভাব এই সমস্যার মূল কারণ। তারা পরিবেশবিদ, কৃষি বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যকর উদ্যোগ এবং জৈব কৃষি ও পরিবেশবান্ধব চাষাবাদের প্রচারে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাপত্র পাঠ করেন গবেষণা সহকারী গাজী নাফিউর রহমান হিমেল। বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল চন্দ্র রায়ের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন বারসিক সভাপতি অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, বারসিক কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
Comments