Image description

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণে ৬৫১ কোটি টাকা ব্যয় হলেও রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ২০১৪ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) কর্তৃক অনুমোদিত এই প্রকল্পের ব্যয় প্রাথমিকভাবে ৫৪৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৬৫১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বর্ধিত সময়সীমা শেষ হলেও কাজ এখনো অসম্পূর্ণ, ফলে জেলাবাসী কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে, এবং ২০২০ সালের মধ্যে হাসপাতালটি চালু করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারি, নির্মাণ ত্রুটি, বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবসহ নানা কারণে কাজ বারবার পিছিয়েছে। বর্তমানে নতুন সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায় ঝালকাঠির খান বিল্ডার্স ও বঙ্গ বিল্ডার্স (জেভি), এবং কাজ বাস্তবায়ন করেন ঠিকাদার নাসির খান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভবনের ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ ও অক্সিজেন সরবরাহ লাইন স্থাপনের কাজ বাকি রয়েছে। এ কারণে ভবনটি এখনো স্বাস্থ্য বিভাগে হস্তান্তর হয়নি। ফলে পুরোনো ২৫০ শয্যার হাসপাতালে তিনগুণ রোগীর চাপে কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শয্যা সংকটের কারণে অনেক রোগীকে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি এক শিশুর মা নিলুফা বেগম বলেন, “একটি বেডে তিনটি শিশু ও তাদের মায়েদের থাকতে হচ্ছে। এই কষ্ট অসহনীয়।” একই অভিযোগ করেন রোগীর স্বজন শেফালী বেগম ও সিরাজ মিয়া। সিরাজ বলেন, “নতুন ভবন দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু আমরা মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। এটা খুবই দুঃখজনক।”

পটুয়াখালী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, “নতুন ভবন চালু হলে ৫০০ শয্যার সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে, যা রোগীর চাপ অনেকটাই কমাবে। আমরা শুনেছিলাম জুন মাসে ভবন হস্তান্তর হবে, কিন্তু এখনো তা হয়নি। সাবস্টেশন ও অক্সিজেন লাইনের কাজ চলছে। আশা করছি, শিগগিরই ভবনটি বুঝে পাব।”

প্রকল্প পরিচালক ডা. এস এম কবির হাসান বলেন, “নানা কারণে কাজ পিছিয়েছে। আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পেলে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হবে। ২০২৬ সালের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।”

পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন, “হাসপাতালের কাজ প্রায় শেষ। বিদ্যুৎ সংযোগই এখন প্রধান বাধা। সাবস্টেশন এসেছে, এবং সংযোগের প্রস্তাব খুলনার বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান কার্যালয়ে রয়েছে। অনুমোদন পেলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে ভবন চালু করা সম্ভব হবে।”

এদিকে, ঠিকাদার নাসির খানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, নতুন ভবন চালু না হওয়ায় জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে এবং সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে। তারা দ্রুত কাজ সম্পন্ন করে হাসপাতাল চালুর দাবি জানিয়েছেন।