
বিগত সরকার নির্বাচান নিয়ে বেশ তামাশা করেছে। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা গণতন্ত্রের জন্য জরুরি। কারণ নির্বাচন একটি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূলভিত্তি। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন শুধু একটি সরকারের বৈধতা নিশ্চিত করে না, বরং নাগরিকদের অধিকার চর্চার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য- আমাদের দেশে নির্বাচন নিয়ে নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষ করে ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের অনুপস্থিতি নিয়ে। এমন তামাশায় কেবল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল হয় না, রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়ে। জনগণের আস্থা হারিয়ে গেলে শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করলেই তা যথার্থ গণতান্ত্রিক সরকার হয় না। সংসদ নির্বাচন নিয়ে জল ঘোলাও কম হচ্ছে না- অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই আলোচনা শুরু হয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে।
দেশে পরিস্থিতি এমন হয়েছে দ্রুত নির্বাচনের প্রয়োজন কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে- এমন সময় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্পষ্ট কোন রোডম্যাপ নেই। তবে এবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কাটছে ধোঁয়াশা।
নির্বাচনী ট্রেন অনেকটা গোলক ধাঁধা থেকে বেরিয়ে সম্ভাবনার রাস্তায় উঠতে যাচ্ছে। আগস্ট মাসের শুরুতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বর্ষপূর্তির আগেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ উল্লেখ করবেন। এক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট হবে এমন ঘোষণা দিতে পারেন। এতে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে যে অনিশ্চয়তার কথা বলা হচ্ছে- তা কেটে যাবে। শনিবার ১৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ড. ইউনূস বলেন- ‘পতিত শক্তি গণ্ডগোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অভ্যুত্থানের সব শক্তি মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে না পারলে এই মস্তবড় সুযোগ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। যখনই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি তখনই নানা ষড়যন্ত্র সামনে আসছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কোনো ষড়যন্ত্রেই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। কারণ ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে সবগুলো গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য স্পষ্ট। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।’
ভুলে গেলে চলবে না- গণতন্ত্রের মূল শক্তি জনগণ। তাদের ইচ্ছাই রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বোচ্চ ভিত্তি হওয়া উচিত। তাই সকল রাজনৈতিক দলের উচিত হবে প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা, এই বৈঠকে তারা আশ্বাসও দিয়েছে। এই আশ্বাস যেন আশ্বাসের বেড়াজালে বন্দি না থাকে- এমন প্রত্যাশা সবার। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সংশয়-সন্দেহ নতুন কিছু নয়। দফায় দফায় বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো আলোচনাই ফলপ্রসূ হয়নি। আশা করছি এবার এই অন্ধকার কাটিয়ে আলো আসবে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও নাগরিক সমাজের ওপর দায়িত্ব বর্তায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধান অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক রাখা। তাই এখন সময় হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা দেখানোর, নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা প্রমাণ করার এবং সবচেয়ে বড় কথা- জনগণের ভোটাধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার।
একটি সুস্থ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী সংস্কৃতি গড়ে তোলাই আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা জনগণের প্রধান প্রত্যাশা, যা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন সময়ের দাবি।
নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফেরাতে প্রথমেই প্রয়োজন হবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন ও তা সম্পন্নের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আসুক। গোলক ধাঁধা থেকে বেরিয়ে নির্বাচনী ট্রেন আসুক স্বচ্ছ আলোর পথে।
Comments