Image description

ঝালকাঠি জেলার গ্রামাঞ্চলে নদীর পানি ঢুকছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে জেলার সুগন্ধা, বিষখালী, গাবখান, হলতা ও ধানসিঁড়িসহ সব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি গ্রামের মাটি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে, সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে নদীর তীরবর্তী জনপদ ও চরাঞ্চলে ৭মিটার পানি জমেছে। রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া, নিজামিয়া, পালট, বাদুরতলা এবং নলছিটির নাচনমহল, ভবানিপুর, কাঁঠালিয়ার আমুয়া, পাটিকালঘাটাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তি এলাকার মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলার সুগন্ধা, গাবখান, বিষখালী, ধানসিড়ি ও হলতা নদীর পানির উচ্চতা গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে, জেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গেছে। 

আন্তর্জাতিক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, "শুক্রবার (২৫জুলাই) দুপুর ১ টার পর থেকে শনিবার সকাল ৬ টার মধ্যে সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপে বরিশাল বিভাগের সকল জেলার উপরে বজ্রপাতসহ মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টিপাতের প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।"

সুগন্ধা, হলতা, বিষখালী, গাবখান ও ধানসিড়ি নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। নদীর পাড় উপচে ঝালকাঠির বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলার প্রধান তিন নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এরই মধ্যে ঝালকাঠির চার উপজেলার ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় ঝালকাঠি সদর, কাঁঠালিয়া, নলছিটি ও রাজাপুর উপজেলায় ডুবেছে এ ৩০টি গ্রাম।

শুক্রবার দুপুরে বিষখালীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে সদর উপজেলার বৈদারাপুর, ভাটারাকান্দা, সাচিলাপুর, কিস্তাকাঠি, মানকিসুন্দর, নাপিতেরহাট, কাঁঠালিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন চত্বরসহ বিভিন্ন সড়ক।

এই সময়ে আউরা ও শৌলজালিয়া আশ্রয়ণ এলাকা, কাঁঠালিয়া গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বর, কাঁঠালিয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বর এবং চিংড়াখালী, জয়খালী, মশাবুনিয়া, ছৈলারচর, কচুয়া, রঘুয়ারদরি চর, জাঙ্গালিয়াসহ তলিয়ে গেছে অনেক গ্রাম। এসব এলাকার কৃষি, মৎস্য ও কাঁচা-পাকা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছে।

কাঁঠালিয়া উপজেলার চিংড়াখালী গ্রামের তুহাব্বর সিকদার, কৈখালি গ্রামের আবুল বাসার, ছৈলারচর এলাকার সেলিনা বেগম এবং কচুয়ার নাসির উদ্দিন দুর্ভোগের বিষয়ে জানিয়ে বলেন, ‘বিষখালীর কাঁঠালিয়া অংশে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতি বছর বর্ষায় বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। জরুরিভাবে কাঁঠালিয়া অঞ্চলে বিষখালীর তীরে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন।

শুক্রবার দুপুর থেকে জোয়ারের পানির চাপ অতিমাত্রায় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি এলাকার সরই গ্রামের বাসিন্দারা।

ওই গ্রামের নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা ভাঙ্গলকুলের বাসিন্দা। প্রতিবছর সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ পাড় ভেঙে আমাদের ভিটেমাটি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। বর্তমানে জোয়ারের পানি বৃদ্ধিতে এলাকার মাটি নরম হয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে। এই পানি নামার পর আবার আমরা ভাঙনের কবলে পড়ব। এ জন্য সরই এলাকায় বাঁধ নির্মাণ আমাদের প্রাণের দাবি।’

ঝালকাঠি পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিষখালী নদীর পানির উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি এখন বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে।

জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান জানান, পানির চাপ আরও বাড়লে নিম্নাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে।