
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিতে ব্যবসায়ীরা যখন দিশেহারা; তখন মুনাফা বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর। নতুন করে তারা ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে নৌ মন্ত্রণালয়ে। তাদের এই প্রস্তাব গত বৃহস্পতিবার অনুমোদনও দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
একই সময় শতকোটি টাকা আয় করেছেন বেসরকারি ১৯টি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) মালিকরাও। কোনো আলোচনা ছাড়া তারাও সর্বনিম্ন ২৯ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ চার্জ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আইসিডির বর্ধিত চার্জ কার্যকর হবে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরেও সব খরচ মিটিয়ে দুই হাজার ৯১২ কোটি টাকা বাড়তি আয় করেছে চট্টগ্রাম বন্দর।
দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে চট্টগ্রাম বন্দর ও ১৯টি বেসরকারি আইসিডি। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলারের বিপরীতে টাকার দাম ওঠানামা করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ঘিরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যখন টালমাটাল; তখন আমদানি-রপ্তানির প্রধান দুই গেটওয়ের এভাবে চার্জ বাড়ানোর ঘোষণায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন প্রস্তাবনায় প্রতিটি ২০ ফুট একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ ১৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২৩ দশমিক ১৫ ডলার এবং ৪০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে ২২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে ৩৪ দশমিক ৮৩ ডলার করার কথা বলা হয়েছে। জাহাজ পাইলটিং চার্জ ৩৫৭ ডলার থেকে ৭০০ ডলারে উন্নীত করার প্রস্তাবও রয়েছে। বন্দরের প্রস্তাবিত ৫৬টি সেবার মধ্যে ১৮ খাতে ৬০ শতাংশের বেশি, ১৭ খাতে ২০ থেকে ৫৯ শতাংশ এবং ১৯ খাতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাব গেছে মন্ত্রণালয়ে। মাশুল কমানোর প্রস্তাব গেছে মাত্র দুটি খাতে।
বন্দর কর, বার্থিং ফি, ফর্কলিফট চার্জ, অন্য ইউটিলিটি খরচসহ মাত্র পাঁচটি সেবার হার ২০০৭-০৮ অর্থবছরে সামান্য পরিবর্তন হলেও বাকি সব চার্জ ১৯৮৬ সালের পর থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি আইসিডির নতুন চার্জে প্রভাব পড়বে অন্তত ২৫ ধরনের সেবায়। এতদিন বিনামূল্যে হয়েছে– এমন ছয় ধরনের সেবায়ও এবার নতুন চার্জ যুক্ত করেছে তারা। প্রায় শতভাগ রপ্তানি পণ্য ও ৬৫ ধরনের আমদানি পণ্য হ্যান্ডলিং করে বেসরকারি আইসিডিগুলো।
তবে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, বন্দর ও আইসিডির এ পদক্ষেপ প্রভাব ফেলবে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে। এটি মূল্যস্ফীতি আরও বাড়াতে পারে। আমদানি পণ্য আরও ব্যয়বহুল করবে। রপ্তানি পণ্যেরও খরচ বেড়ে যাবে। ব্যবসায়ীরা বাড়তি সেই খরচ সরাসরি ভোক্তার ঘাড়েই চাপিয়ে দেবেন। এর খেসারত দিতে হবে দেশের ১৭ কোটি মানুষকেই। ব্যবসায়ীদের মতামত উপেক্ষা করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রেসক্রিপশনেই সরকার আগেভাগে ট্যারিফ বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
তবে এ অর্থনীতিবিদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ও সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ৩৯ বছর পর এভাবে চার্জ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশপাশের দেশের তুলনায়ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনারপ্রতি চার্জ এখনও অনেক কম।
Comments