
একটি ছোট্ট কফিনে ফিরল আয়মান—যার চোখে ছিল স্বপ্ন, মুখে ছিল হাসি। বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে হার মানল সে। নিহত আয়মানের লাশ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে পৌঁছায় শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাড়িতে। তখন পুরো এলাকা ভারী হয়ে ওঠে কান্নায়।
প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু—সবাই চোখের জলে বিদায় জানায় আয়মানকে। শিশু মৃত্যু যেন পুরো গ্রামকেই স্তব্ধ করে দিয়েছে।
শুক্রবার সকালে ঢাকা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন মৃত্যু হয় আয়মানের। তার শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
দুর্ঘটনার পর থেকে সে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে যাচ্ছিল কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামে লাশ পৌঁছানোমাত্রই কান্নায় ভেঙে পড়ে এলাকাবাসী। কেউ যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না—চঞ্চল, প্রাণবন্ত আয়মান আর নেই। ছোট-বড় সবাই এসে জড়ো হয় তার বাড়ির সামনে।
কান্না থামছিল না কারো।
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশেই ঘটেছিল মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি। ঘটনার দিন ক্লাস শেষে আয়মান বাইরে খেলছিল। তখনই তার চোখে পড়ে আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান পড়ে আসছে। মামা সামিম বলেন, ‘আয়মান দৌড়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তার আগেই বিমানটি ক্র্যাশ করে এবং ফুয়েলে তার শরীর দগ্ধ হয়।
বিধ্বস্ত হওয়ার পরই সে তার শিক্ষকের সাহায্যে দাদুকে ফোন করে। দাদা-চাচারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
জুমার নামাজের পর আয়মানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় উত্তরায়। দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে গ্রামের মসজিদে এশার নামাজের পর। এরপর তাকে দাফন করা হবে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে, তার দাদার কবরের পাশে।
কবর খননকারী একজন বলেন, ‘ছেলেটার জন্য দুপুর থেকেই কবর খননের কাজ করছি। এমন ছোট কবর খনন করতে হবে ভাবিনি কখনো।’
এদিকে বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এখন পর্যন্ত ৩২ জন। দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আরও অন্তত ৫০ জন। আহতদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী, যারা স্বপ্ন দেখছিল ভবিষ্যতের। সেই স্বপ্ন আজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
Comments