
পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে (মিটফোর্ড) সম্প্রতি সোহাগ নামে এক যুবককে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় পুরো দেশ যখন শোকাহত, ঠিক তখনই ওয়ারী হাটখোলা রোডে হত্যার চেষ্টা প্রতিহত করেছে সচেতন জনতা ও দায়িত্বশীল পুলিশ সার্জেন্ট।
সোহাগ হত্যাকাণ্ডের হৃদয়বিদারক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া।
জনাকীর্ণ এলাকায় প্রকাশ্যে পাথর নিক্ষেপ করে এক যুবককে হত্যা করলেও কেউ এগিয়ে না আসার বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে।
রোববার রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ থেকে ৯টার দিকে রাজধানীর ওয়ারী হাটখোলা ইলিশিয়াল ভবনের পেছনের গলিতে ঘটে আরেকটি ভয়াবহ ঘটনা। তবে এবার আর নীরব থাকেনি জনতা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৯টার দিকে ১৭ বছর বয়সী কিশোর সৈয়দ রেদোয়ান মাওলানাকে ঘিরে ধরে মারধর করতে থাকে ৬ থেকে ৭ জনের একটি দল। তারা রেদোয়ানের মাথায় মোটরসাইকেলের হেলমেট দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা ইট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করতে উদ্যত হলে,সেখানে উপস্থিত স্থানীয় অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জন সাধারণ মানুষ এবং দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট দ্রুত এগিয়ে এসে এ বর্বরতা প্রতিহত করেন।
ঘটনাস্থলেই দুই হামলাকারী আব্দুর রহিম মাহি (১৯) ও সাব্বির হোসেন রাতুলকে (১৯) আটক করে পুলিশ, বাকি হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
ওয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জাকারিয়া খান জানান, আটক দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাদের দাবি, তারা শিক্ষার্থী এবং যাত্রাবাড়ী এলাকায় বসবাস করে। রেদোয়ান ওয়ারীর এম দাস লেনে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে এবং সম্প্রতি এসএসসি পাস করেছে। রেদোয়ানের মাথায় হেলমেটের আঘাতের পাশাপাশি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছে। তবে এ ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
এসআই জাকারিয়া আরও জানান, আহত রেদোয়ান বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। কী কারণে হামলা হয়েছে, তা তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
এ বিষয়ে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল আহমেদ বলেন, হামলাকারী শিক্ষার্থী বলছে, আহত ছেলেটিও শিক্ষার্থী। তারা পূর্বপরিচিত ছিল কিনা কিংবা ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা ছিল কি না—সবই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এবার জনতা আর নীরব ছিল না। সবাই মিলে প্রতিরোধ করেছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, আটক দুই যুবককে লক্ষ্য করে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছে, "তোদের মতো লোকদের কারণেই দেশটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তোদের আর ছাড় নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যদি সোহাগ হত্যার সময় মানুষ এভাবে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতো, তাহলে সে আজ হয়তো বেঁচে থাকত। আজ ওয়ারীতে যেটা হলো, সেটা পুরো সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
Comments