
নির্বাচন নাকি সংস্কার- দুটি বিষয় নিয়েই জল ঘোলা কম হলো না। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই আলোচনা শুরু হয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। দেশে পরিস্থিতি এমন হয়েছে দ্রুত নির্বাচনের প্রয়োজন কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বার্তা আসলেও স্পষ্ট কোন রোডম্যাপ নেই। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের বার্তা- এমন ধারণা পোষণ করে বিএনপি। দলটি আরো বলছে- আলোচনার বিষয়গুলো জনগণের সামনে স্পষ্ট করার দাবি এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্থানীয় নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই।
জনগণের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা- দেশ ভালো থাকুক। সংস্কার বা নির্বাচন নিয়ে তাদের তেমন কোনো সমস্যা নেই। দেশ স্থিতিশীল হোক এটাই চাওয়া। তবে জনগণকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলগুলো ফায়দা লুটতে পারে এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়। নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার- এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
দেশের মানুষ সবকিছুর স্থিরতা চাচ্ছেন, তাই এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তুতি দৃশ্যমান না হওয়ায় কবে ভোট সম্পন্ন হবে এ নিয়ে গুঞ্জনের ডালপালা মেলছে সর্বত্র। অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডনের বৈঠকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচনের কথা বললেও প্রকৃত অর্থ সহসায় ধোঁয়াশা কাটছে না।
সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, আইন-বিধি সংস্কার, ভোটার তালিকা ও ভোটকেন্দ্র স্থাপনসহ প্রাথমিকভাবে ২২টি বিষয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। দুয়েকটি বিষয় ছাড়া সবগুলো কাজ অক্টোবরের মধ্যে সমাপ্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসি সচিবালয়ের। বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক।
এদিকে সরকার গঠনের পর বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। এরমধ্যে কোনোটি দৃশ্যমান আবার কোনোটি অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার বা নির্বাচনের কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচনÑ এ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও দেশবাসী এখন ধোঁয়াশার মধ্যে আছে।
প্রশ্ন হচ্ছে- সবকিছু ইতিবাচকভাবে যাচাই-বাছাই করে জনমুখী সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেয়াটাই হচ্ছে এ সরকার ও ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে নির্বাচন না হলে দেশের সংকট-অনিশ্চয়তা কাটবে না। সংস্কারের ব্যাপারে কারও কোনো আপত্তি নেই। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সরকারের উচিত দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাওয়া। এরমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ১০ মাস পেরিয়ে গেছে। সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে বলা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের প্রত্যাশা আর কেউ পূরণ করতে পারবে না। নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল। দুঃখজনক হলেও সত্য সংস্কার বা নির্বাচন কোনো কিছুরই দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ইতোমধ্যে নানা বিষয়ে রাজনৈতিক দল এবং আদর্শের বিরোধ গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ইসির পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আসলে বোঝা যাবে নির্বাচন নিয়ে সরকার কী ভাবছেন?
নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা জনগণের প্রধান প্রত্যাশা, যা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন সময়ের দাবি। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা এবং জনগণের আস্থা অর্জনে সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফেরাতে প্রথমেই প্রয়োজন হবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন। নির্বাচন কমিশনের সফলতা নির্ভর করবে তাদের প্রজ্ঞা, দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতার ওপর। ধোঁয়াশা কাটিয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করা সময়ের দাবি।
Comments