Image description

ভারতের চেন্নাইয়ের এশিয়ান কলেজ অব জার্নালিজমে সাংবাদিকতায় এক বছরের স্নাতকোত্তর কোর্সে ফুল স্কলারশিপ পেয়েছেন রিগ্যান মোর্শেদ (ছদ্মনাম)। তার ক্লাস শুরু হয়েছে গত ২৮ জুন, কিন্তু এখনো তিনি যোগ দিতে পারেননি। কারণ  ভারতের ভিসা পাননি তিনি।

গত ১১ জুন ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন রিগ্যান। কিন্তু সময়মতো ভিসা না পাওয়ায় স্কলারশিপটি হারানোর শঙ্কায় তিনি। ইতোমধ্যে তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী চাকরি ছেড়ে শিক্ষাজীবনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এখন দিশেহারা হয়ে দিন কাটছে এই তরুণের। এখনো ভিসার জন্য পথ চেয়ে রিগ্যান। আছেন ভিসা পেলেও স্কলারশিপ হারানোর শঙ্কায়।

রিগ্যানের মতো ভিসা-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তায় পড়েছেন আরও অনেকে। ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা কিংবা ভ্রমণ-সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ভারত ভ্রমণ ভিসা পুরোপুরি বন্ধ করে রেখেছে। অন্য ক্যাটাগরির ভিসার হারও অনেক কম। ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সংক্রান্ত একটি আন-অফিসিয়াল পেজে রিগ্যানের মতো অসংখ্য কেস স্ট্যাডি আছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া কিংবা ইউরোপ-আমেরিকার ভিসাও এখন সোনার হরিণ!

চাকরিসূত্রে ও পর্যটক হিসেবে একাধিকবার থাইল্যান্ড সফর করেছেন কনা করিম। পাসপোর্টে রয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার একাধিক দেশের ভিসাও। তবে এবছর এপ্রিল মাসে আবেদনের পর ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছে ঢাকার থাই দূতাবাস।

চীন থেকে পণ্য আমদানি করা একজন ব্যবসায়ীর নিয়মিত চীন সফরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। গত তিন বছরে অন্তত ছয়বার চীনে গেছেন তিনি। কিন্তু এবার জুন মাসে তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

তাজিকিস্তানের মতো সাধারণ ভিসাও তিন সপ্তাহ অপেক্ষার পর রিজেক্ট। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ার ভিসা দেখিয়েও কোনো লাভ হলো না।- ইউটিউবার ও ব্লগার নাদির নিবরাস

ব্যবসায়িক স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী এটার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। জরুরি মিটিং এবং ব্যবসায়িক কাজ থাকার পরেও ভিসা পাইনি। গত কয়েক বছরে এই প্রথম এমন অভিজ্ঞতা হলো। তবে ঠিক কী কারণে ভিসা পেলাম না সেটা জানার সুযোগ নেই।’

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাংলাদেশিদের এখন বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। তারা বলছেন, আগে ইউরোপ-আমেরিকার ভিসার ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যানের হার বেশি থাকলেও এখন যেন সেটা অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাদ যাচ্ছেন না সেলিব্রেটিরাও।

সম্প্রতি নামি বাংলাদেশি ভ্রমণ বিষয়ক ইউটিউবার ও ব্লগার নাদির নিবরাস এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। নাদির নিবরাস সম্প্রতি তিনটি দেশের ই-ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। ৪ জুলাই এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘তাজিকিস্তানের মতো সাধারণ ভিসাও তিন সপ্তাহ অপেক্ষার পর রিজেক্ট। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ার ভিসা দেখিয়েও কোনো লাভ হলো না।’

নাদির জানান, বৈধ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার ভিসা এবং পর্যাপ্ত অর্থ থাকলেও তাজিকিস্তানের মতো সাধারণ ই-ভিসাও পাননি তিনি। কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়, ফি-ও ফেরত দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলে অনেক দেশের ভিসা যতটা সহজ মনে হয়, বাস্তবে ততটা না।’ মলদোভা ও বাহরাইনের ই-ভিসার ক্ষেত্রেও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে তার।

নাদির বলেন, ‘অনেকে জানতে চান আমি যুদ্ধবিধ্বস্ত বা বিতর্কিত দেশগুলোতে যাই না কেন। আসলে এমন দেশের ভিসা পাসপোর্টে থাকলে উন্নত দেশের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সে ঝুঁকি এখন নেওয়া সম্ভব না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভ্রমণ গ্রুপগুলোতেও এখন এমন হতাশা নিয়মিত চোখে পড়ে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, ভিসা ফি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও কোনো ব্যাখ্যা না দিয়েই আবেদন বাতিল করা হচ্ছে।