বসতবাড়ি ছেড়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের কুমরুড়া গ্রামের দুই হিন্দু পরিবারের লোকজনের ওপর অমানবিক, বর্বরোচিত চাঞ্চল্যকর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে একই গ্রামের বখাটে রাব্বী এবং তার সহযোগীরা। বখাটে রাব্বী'র ভয়ে বাধ্য ওই হিন্দু পরিবারের লোকজনরা গত ৫/৬ দিন ধরে নিজেদের বসতবাড়ি ছেড়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
জানা যায়, প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে পরিবারগুলোর নিরাপত্তা চেয়ে আইনি সহায়তার জন্য লিখিত অভিযোগ করলেও এখনো তারা কোন সুরাহা পায়নি।
ভুক্তভোগী হিন্দু দুটি পরিবারের প্রধান খোকন চক্রবর্তী (৪৮) ও তার বড়বোন স্মৃতিরাণী ভট্টাচার্য (৭০), এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটির আইনি সহায়তা পেতে গত ৩০ জুন কেন্দুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন শিবনাথ চক্রবর্তী নামের একজন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত রাব্বী'র মা অভিযোগকারী শিবনাথ চক্রবর্তী'র আপন ছোটবোন সীমা চক্রবর্তী। সীমা চক্রবর্তী ধর্মান্তরিত হয়ে আব্দুল খালেকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকেই ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী দুই পরিবারের সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবেই ছিন্ন হয়ে যায়।
শিবনাথ চক্রবর্তী অভিযোগে উল্লেখ করেন রাব্বী স্থানীয়ভাবে একজন সন্ত্রাসী, গুন্ডা ও চাঁদাবাজ, সে বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে বিভিন্ন ধরনের কুকর্মে নিজেকে লিপ্ত রাখে। রাব্বী গত ৮ জুন, ১৪ জুন এবং সর্বশেষ গত ২৮ জুন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়।
সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, অভিযুক্ত রাব্বী বেশ কিছুদিন ধরে তাদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি সহ নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করে আসছে।
এছাড়াও রাব্বী মুঠোফোনে কল করে মোটরসাইকেল ক্রয়ের জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার ও নগদ আরো ২ লাখ টাকা সহ মোট ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা শিবনাথ চক্রবর্তী'র মুঠোফোনে কল করে চাঁদা দাবি করে। তারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় রাব্বী রামদা নিয়ে হিন্দু পরিবারগুলোর বসতবাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে হামলা ও ভাঙচুর করে প্রায় ৮০ হাজার টাকা ক্ষতিসাধন করে এবং তাদের প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে।
সর্বশেষ গত ২৮ জুন অভিযুক্ত রাব্বী অজ্ঞাত আরও ৭/৮ জন সহযোগীকে সাথে নিয়ে পুনরায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর আনুমানিক ৬০ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করে এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা, সাড়ে তিনভরি ওজনের স্বর্ণালংকার যার আনুমানিক মূল্য ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ঘরে থাকা ধান-চাল লুট করে নিয়ে যায়। লুটপাট করে নিয়ে যাবার সময় চাঁদার টাকা দ্রুত দেয়ার জন্য হুমকি প্রদান করে অন্যথায় টাকা না দিলে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে রাব্বী ও তার সহযোগীরা।
এই ঘটনার পর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারের লোকজন প্রাণের ভয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে তারা জানান।
ভুক্তভোগী হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারের লোকজন কেন্দুয়া প্রেসক্লাবে এসে জানান, রাব্বী ও তার সহযোগীদের ভয়ে গত ৫/৬ দিন ধরে নিজেদের বসতবাড়ি ছেড়ে তারা ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ীতে অবস্থান করছেন। কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কেন্দুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আইনি সহায়তার জন্য। তারা আরও জানান ঘটনার এতোদিন পার হলেও এখনো কোন সহযোগিতা আমরা পাইনি।
বলাইশিমুল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও অত্র ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী আকবর তালুকদার মল্লিক জানান, এটা তাদের পারিবারিক বিষয়। এতে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
অভিযুক্ত রাব্বী'র মুঠোফোন নাম্বার না পাওয়ায় তার পিতা আব্দুল খালেকের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
কেন্দুয়া থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, এবিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি, ঘটনাটি তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। অভিযোগটি তদন্তাধীন, তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Comments