Image description

দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার বলেছেন, গণঅভ্যুত্থান হয়ে গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায়  'রেজিম চেঞ্জ' বা শাসনের পরিবর্তন । জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি গণমাধ্মে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই বিস্ফোরক  মন্তব্য করেন।

ফরহাদ মজহার বলেন, ৫ আগস্টের পর ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার সংবিধান রক্ষার শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে 'সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব' ঘটেছে। তার মতে, জনগণের অর্জিত নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নের ক্ষমতা বা 'কনস্টিট্যুয়েন্ট পাওয়ার' এর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, গণঅভ্যুত্থান বিচ্ছিন্ন এলিট শ্রেণির নেতৃত্বে সংস্কার চলছে, যা মূলত লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণিসহ দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী শক্তির মধ্যে একটি 'নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত'।

মার্কিন অর্থনীতিবিদ জেফরি স্যাকসের ১৮ আগস্টের একটি মন্তব্য উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, "পাকিস্তানে ইমরান খানের সরকার পতনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার খুবই শক্ত প্রমাণ রয়েছে। এ থেকে ধারণা তৈরি হয়, একই রকম কিছু বাংলাদেশে ঘটে থাকতে পারে।" তিনি প্রশ্ন তোলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন করে 'রেজিম চেঞ্জ' করতে চেয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও 'রেজিম চেঞ্জ' হয়েছে কি না—এই সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ফরহাদ মজহার সেক্যুলার বাঙালি জাতিবাদী ফ্যাসিবাদের বিপরীতে ধর্মীয় জাতিবাদী ফ্যাসিবাদের উত্থানের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, ইসলামবিদ্বেষ ও ইসলাম নির্মূল রাজনীতির ফলে সমাজে ইসলামের সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক বা দার্শনিক বোঝাপড়া গড়ে ওঠেনি। লুটেরা শ্রেণির লুটপাট এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্যের কারণে মানুষ ইহলৌকিক জীবন থেকে ভরসা হারিয়ে পরকালাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে, যা সমাজ ও রাজনীতির জন্য ভয়াবহ হতে পারে।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি এবং বিশ্বজুড়ে জায়নবাদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিরোধের কথাও তুলে ধরেন তিনি। ফরহাদ মজহারের মতে, বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান সেই বৈশ্বিক রাজনীতিরই অংশ।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা প্রসঙ্গে ফরহাদ মজহার বলেন, ভারতের হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তরে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ড. ইউনূসকে 'অনেক প্রজ্ঞাবান ও সতর্ক হতে হবে' যাতে জেফরি স্যাকসের মূল্যায়ন (মার্কিন স্বার্থ রক্ষার জন্য রেজিম চেঞ্জ হয়েছে) সঠিক বলে প্রমাণিত না হয়।

ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে ফরহাদ মজহার বলেন, এটি ভালো বলে মনে হচ্ছে না। তিনি আশঙ্কা করেন, ফ্যাসিস্ট শক্তি এবং জাতিবাদী ইসলাম জোট বাঁধতে পারে, যা গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশকে রুদ্ধ করবে। তবে তিনি তরুণদের ওপর আস্থা রাখেন এবং মনে করেন, তারাই জুলাইয়ের বিপ্লবী স্পিরিটকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব থেকে বেরোনোর পথ হিসেবে তিনি 'গণসার্বভৌমত্বের' ধারণা পরিষ্কার বোঝার এবং লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণির রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে 'জাতীয় ঐকমত্য' প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আত্মঘাতী বলে উল্লেখ করেন। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে না যে নির্বাচন বাংলাদেশকে ভালো জায়গায় নেবে।