
ফরিদপুরের বাজারে হঠাৎ করে কমে গেছে পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম কমেছে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। ফলে পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কৃষকরা এবার পেঁয়াজ চাষে পড়েছেন বড় ধরনের সংকটে।
কৃষকরা জানান, উৎপাদন খরচ, শ্রমিক মজুরি ও পরিবহন খরচ মিলে যেখানে প্রতি মণ পেঁয়াজ চাষিদের ২ হাজার টাকার ওপরে খরচ পড়েছে। কিন্তু বাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে ১৪৫০ থেকে ১৬০০ টাকায়। ফলে প্রতিমণেই লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।
শুক্রবার (২৭ জুন) সরেজমিনে উপজেলার বালিয়া বাজারের পেঁয়াজ হাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের তুলনায় বিক্রেতার সংখ্যা বেশি। অনেক কৃষক দাম শুনেই হতাশ হয়ে পেঁয়াজ না বেচেই ফিরে যাচ্ছেন।
বালিয়া বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা এক পেঁয়াজ চাষি হতাশার সুরে বলেন, সার, বীজ, কীটনাশক, শ্রমিক, পানি সবকিছুর খরচ মিলে প্রতি মণ পেঁয়াজে গড়ে ২০০০ টাকা খরচ হয়েছে। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। আমরা কি খাবো?
ঠেনঠেনিয়া হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা মনির হোসেন বলেন, ভালো দাম আসবে এই আশায় ঘরে রেখেছিলাম, এখন সেই পেঁয়াজ ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। বাকিটাও বিক্রি করতে হচ্ছে লোকসানে। যদি এখন বাজারে দাম ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৩৫০ টাকা থাকত, তাহলে অন্তত লোকসান হতো না।
সালথা উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে সাপ্তাহিক হাট বসে যেখানে হাজার হাজার মণ পেঁয়াজ কেনাবেচা হয়। যার মধ্যে শনিবার ও বুধবার নকুলহাটি, রবি ও বুধবার ঠেনঠেনিয়া, সালথা সদর হাট ও শুক্রবার ও সোমবার বালিয়া গট্টি, কাগদি, জয়কাইল, মোন্তার মোড়, মাঝারদিয়া, বাউষখালী ও যদুনন্দীতে বসে পেঁয়াজের হাট। এসব হাটে ফরিদপুর ছাড়াও আশপাশের জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে পাইকাররা এসে ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যান।
পেঁয়াজ চাষিরা বলছেন, পেঁয়াজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফসলের জন্য সরকারিভাবে ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা উচিত। ধান বা গমের মতো পেঁয়াজেও সহায়তা পেলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না। পাশাপাশি প্রতি ইউনিয়নে কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার গড়ে তুললে পেঁয়াজ সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছন তারা।
চাষি সিরাজ মোল্যা বলেন, আমরা চাই প্রতি মণ পেঁয়াজের নূন্যতম দাম ২ হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা করা হোক। না হলে আমাদের মত চাষিরা পেঁয়াজ চাষ ছেড়ে দিবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সালথা উপজেলায় পেঁয়াজের চাষ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ যা ১ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টনের বেশি।
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার সুদীপ বিশ্বাস বলেন, ফলন খুবই ভালো হয়েছে। কৃষকরা পরিশ্রম করেছেন। তবে এখন বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা কমে গেছে। আমরা কৃষকদের সাহস ও পরামর্শ দিয়ে পাশে আছি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুদর্শন সিকদার বলেন, কৃষিপণ্যের বাজার সবসময় চ্যালেঞ্জিং। সম্প্রতি বৃষ্টিপাত ও বাইরে থেকে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম পড়ে গেছে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
Comments