
পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটিতে চোখ রাঙাচ্ছে ম্যালেরিয়া। ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে এ রোগ। দিন দিন বাড়ছে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তবর্তী রাঙ্গামাটির ৪টি উপজেলা জুরাছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়ি এবং বিলাইছড়িতে ম্যালেরিয়া রোগের প্রার্দুভাব বেড়েই চলছে। গত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এই ৫ মাসে ৪ উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৫৪৭ জন। এছাড়া বাকী ৬ উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে ১২৯ জন। তবে এ রোগে এখনও পর্যন্ত কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছে রাঙ্গামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়া যুক্ত অঞ্চলে ম্যালেরিয়া প্রার্দুভাব সবচেয়ে বেশি। এখন কিছুর বছর যাবৎ দেখা যাচ্ছে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সারা বছরই ম্যালেরিয়া রোগী ধরা পড়ছে।
আরও জানিয়েছে, রক্তপরীক্ষায় ম্যালেরিয়া জীবাণু ধরা পড়লে, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে পরামর্শ। চিকিৎসায় অবহেলা করলে, সংক্রমণ গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে জন্ডিস, রক্তাল্পতা, খিচুনি, মানসিক বিভ্রান্তির মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ম্যালেরিয়া আক্রান্তের কিডনি বিকল হওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। অনেক সময় কোমায়-ও চলে যেত পারেন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর হতে পারে মৃত্যুও।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, দুর্গম গ্রামগুলোতে ম্যালেরিয়া এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের গ্রামে গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো উপজেলা থেকেই রোগী রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং শারীরিক অবস্থা বুঝে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। এছাড়াও পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে। মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত বর্ষা শুরুর আগে, বর্ষার সময় এবং বর্ষার পরে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। এখন সারা বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তন বা বৃষ্টির কারনে ম্যালেরিয়া রোগী বেড়ে চলছে। রাঙ্গামাটি জেলার ৪টি উপজেলা ভারত সীমান্তবর্তী ও যোগাযোগ দুগর্মতার কারণে স্থানীয়দের চিকিৎসা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, রাঙ্গামাটিতে ২০২৩ সালে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ছিল ৪ হাজার ৭১৪ জন। ২০২৪ সালে আক্রান্ত ছিল ৩ হাজার ৭৬৮ জন এবং ২০২৫ সালে গত ৫ মাসে এখনও পর্যন্ত ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৬৭৬ জন।
রাঙ্গাামাটি জেলা সিভিন সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট ৫ মাসে রাঙ্গামাটিতে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে মোট ৬৭৬ জন। এরমধ্যে রাঙ্গামাটির ১০ উপজেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হলো রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় ১৫জন, বরকল ৮৪ জন, বাঘাইছড়ি ৯৯ জন, কাউখালী ১ জন, বিলাইছড়ি ১৫৬ জন, কাপ্তাই ২৯ জন, জুরাছড়ি ২০৮ জন লংগদু ৭ জন, রাজস্থলী ৬৩ জন নানিয়ারচর ৩ জন এবং রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে রয়েছে ১১ জন সহ মোট ৬৭৬ জন। তবে এরমধ্যে ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়ি এবং বরকলে বেশি আক্রান্ত রোগী ৫৪৭ জন।
জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অনন্যা চাকমা জানান, সাধারণত হচ্ছে বর্ষার সময় বা বৃষ্টি হলে ম্যালেরিয়ার প্রার্দুভাব বেড়ে। তবে এখন দেখা যাচ্ছে, কিছু বছর যাবৎ লক্ষ্য করা হচ্ছে, সারা বছর ধরে সব সময় ম্যালেরিয়া রোগী ধরা পড়ছে। এখন সেটি হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এবং দেখা যাচ্ছে বর্ষা মৌসুম ছাড়াও অন্যান্য মৌসুমে বৃষ্টি হচ্ছে ফলে পানিগুলো জমা হয়ে এতে ম্যালেরিয়া জীবাণু ছড়াচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটি ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ অমিত দে জানান, ম্যালেরিয়া হচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের জন্য একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। আমাদের জাতীয় সরকার ম্যালেরিয়া র্নিমূল করার জন্য সারা দেশের ন্যায় রাঙ্গামাটিতেও ম্যালেরিয়া র্নিমূল কর্মসূচির কার্যক্রম চলছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে এসেছে। গত বছর এই সময় রোগী ছিল ৯৪৫ জন এবং সেই হিসেবে এ বছর মে মাস পর্যন্ত রোগী ৬৭৬ জন।
তিনি আরও জানান, পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ একটু বেশি। সেই কারনে সীমান্তবর্তী ৪টি উপজেলা বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি এবং বরকলে ম্যালেরিয়া রোগী বেশি পাওয়া যায়। তবে অন্য বছরের তুলনায় বাঘাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলায় রোগী কমলেও নতুনত্ব কিছু জায়গায় সীমান্ত সড়কের কারণে রোগী পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, রাজস্থলীতেও কিছু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তবে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। নিজেদের আশপাশের জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের টিম কাজ করছে। প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র মজুদ রয়েছে। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত এলাকাগুলো গুরুত্বের সাথে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।
Comments