একটি অর্থনৈতিক ফোরামে বক্তব্য রাখার সময় ফের ইউক্রেনকে নিজেদের বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেন্ট পিটার্সবার্গে রাশিয়ার প্রধান বিনিয়োগ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে, ক্রেমলিন নেতাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, এই সংঘাতে তার শেষ লক্ষ্য কী হতে চলেছে।

উত্তরে পুতিন বলেন, "অনেকবার বলেছি, আমি রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় জনগণকে এক জাতি বলে মনে করি। এই অর্থে, সমগ্র ইউক্রেন আমাদের।" তার এই মন্তব্যের পর অডিটোরিয়ামে উপস্থিত রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা করতালিতে ফেটে পড়েন। পুতিন আরও বলেন, "যেখানে একজন রাশিয়ান সৈন্য পা রাখে, সেটাই আমাদের।"

পুতিনের এই বক্তব্য অনেকের কাছেই আশ্চর্যজনক লেগেছে, কারণ এটি ক্রেমলিনের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন থেকে শান্তি চুক্তির জন্য তার প্রচেষ্টা শুরু করেছেন, তখন থেকেই মস্কো আরও নরম, আরও সমঝোতামূলক সুরে কথা বলতে শুরু করেছিল। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটনকে বোঝানোর একটি স্পষ্ট চেষ্টা ছিল যে তারা যুদ্ধ নয়, সমঝোতায় আসতে আগ্রহী। তবে পুতিনের গলায় সেই ধরনের কোনো সুর ছিল না; বরং এর সম্পূর্ণ বিপরীত মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এমনকি কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইউক্রেনের উপর পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়েছেন। কিয়েভ যদি রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে 'ডার্টি বোমা' ব্যবহার করে, তাহলে মস্কো কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে জানতে চাইলে, তিনি তার শত্রুর জন্য 'বিপর্যয়কর' পরিণতির হুমকি দেন। পুতিন বলেন, "আজকের ইউক্রেনের ভূখণ্ডে যাদের আমরা নব্য-নাৎসি বলি, তারা একটি বিরাট ভুল করবে। এমনকি এটি তাদের শেষ ভুলও হতে পারে। কারণ আমাদের তরফ থেকে প্রতিক্রিয়া খুবই কঠোর হবে।"

বাইডেন প্রশাসনের শেষ দিনগুলোতে ক্রেমলিনের কাছ থেকে প্রায়শই পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি শোনা গেলেও, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেই হুমকি অনেকটাই নরম হয়েছিল। তবে এখন হঠাৎ করেই পুতিন আবারও স্বমহিমায় ফিরে এসেছেন। অনেকের মতে, এটি ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে খুব সুচিন্তিত বার্তা ছিল যে, শান্তি আলোচনা সত্ত্বেও, রাশিয়ার পিছু হটার কোনো ইচ্ছা নেই, যুদ্ধক্ষেত্রে বা আলোচনার টেবিলেও নয়। 

অনেকেরই মনে হয়েছে, পুতিন ট্রাম্পকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নন। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট এই সংঘাতে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন বলে মনে হলেও, এখনও মস্কোর সাথে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে তিনি আগ্রহী। তবে পুতিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি নিজে যেটা মনে করবেন সেটাই করবেন।