Image description

২০২৪ সালে ২৯ মে অনুষ্ঠিত হয় ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আ’লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মোটরসাইকেল প্রতিক নিয়ে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন উপজেলা আ’লীগের সদস্য মো: গোলাম রাব্বানী। সেই নির্বাচনে গোলাম রাব্বানী মাত্র ২৭২৪টি ভোট পেয়ে জামানত হারান।

আ’লীগ নেতা সেই গোলাম রাব্বানী ভিপি নুরুল হক নুরের দল গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) নওগাঁ জেলা শাখার আহবায়ক পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে বর্তমানে তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমন্বয় কমিটির সদস্য। গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাতে নওগাঁর এনসিপি জেলা সমস্বয় কমিটির সদস্য পদে মো: গোলাম রাব্বানীর নাম প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে দলবদলে বহুরূপী ও সুযোগ সন্ধানী এই নেতার এমন দলবদলের নাটক রাণীনগর উপজেলায় নতুন করে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

এর আগে গত বছরের ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে আ’লীগ সরকারের বিদায়ের পর নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই মূলত অর্থের বিনিময়ে নিজের খোলস পাল্টিয়ে মো: গোলাম রাব্বানী নিজেকে গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক বানিয়ে নেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে নওগাঁ শহরের বিভিন্ন দেয়ালে গণঅধিকার পরিষদের প্রতিক ট্রাক ও ভিপি নুরুল হক নুরের ছবিসহ নতুন বছরের রঙ্গিন শুভেচ্ছা পোস্টার লাগিয়েছিলেন এই গোলাম রাব্বানী।

সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো: গোলাম রাব্বানীর বাবা মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা (তালিকাভুক্ত) আলহাজ্ব আজিজার রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭নং একডালা ইউনিয়ন শাখার সহ-সভাপতি ছিলেন। এই রাজনীতি করতে গিয়ে ৫বার নির্বাচিত জনপ্রিয় একডালা ইউপি চেয়ারম্যান রাব্বানীর বড় চাচা কট্টোর আ’লীগপন্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেনকে ২০০৪ সালে সর্বহারা নামক সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা দিনে-দুপুরে গলা কেটে নির্মম ভাবে হত্যা করে। ২০০৩সালে সর্বহারা নামক গলা কাটা সন্ত্রাসী দলের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেলে নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি ফ্রান্স দেশে চলে যান। এরপর ২০১৮ সালে দেশে ফেরার পর থেকে আওয়ামী লীগের সাথে সক্রিয় ভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করেন। আবাদপুকুর বাজারে গড়ে তোলেন ব্যবসা কেন্দ্র। নিজের আ’লীগ পরিবারের সুবাদে সক্রিয় হয়ে ওঠেন আ’লীগের রাজনীতিতে।

হঠাৎ করেই গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাতে এনসিপি নওগাঁ কমিটি গঠনের সংবাদ পেয়েই ওই রাতেই গোলাম রাব্বানী শহরের একটি রেস্টুরেন্টে গণঅধিকার পরিষদের রাজনীতি থেকে সরে এসে এনসিপিতে যোগদানের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে গোলাম রাব্বানী বলেন, তিনি যেহেতু একজন ব্যবসায়ী তাই বিভিন্ন সময় চাপে পড়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন এবং অনুদান দিতে বাধ্য করা হতেন। তবে তিনি কখনোই আওয়ামী লীগের সদস্য বা দায়িত্বশীল পদে ছিলেন না। তিনি ২০২১ সাল থেকে গণ অধিকার পরিষদের রাজনীতির সাথে যুক্ত হোন। এটাই তার প্রথম রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। কিন্তু দলটির অভ্যন্তরীণ অগণতান্ত্রিক আচরণ, চাপ প্রয়োগ এবং নেতিবাচক রাজনীতির কারণে তিনি গণ অধিকার পরিষদ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সরে দাঁড়িয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাণীনগর উপজেলার একজন রাজনীতিবিদ জানান মো: গোলাম রাব্বানী ছিলেন সুবিধাবাদী একজন ব্যক্তি।ছাত্রলীগ করা এই গোলাম রাব্বানীর আওয়ামী লীগের সাথে ছিল গভীর সম্পর্ক। আ’লীগের নেতাদের সঙ্গে ছিল সব সময় চলাফেরা। গত ৫আগস্টের পর নিজের অর্থের বিনিময়ে গোলাম রাব্বানী একের পর এক দল বদল করেই চলেছেন। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতিকে শেখ হাসিনার দলের সমর্থনে যে ব্যক্তি নির্বাচন করে সে কিভাবে প্রকাশ্যে একের পর এক দল বদল করে আর ওই সব দলের নেতারা কিভাবে এমন প্রতারককে জায়গা দেয় সেটি ভাবনার বাহিরে।

গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কমিটি ও রাজশাহী আঞ্চলিক উপ কমিটির সদস্য এসএম সাব্বির হোসেন বলেন, নওগাঁ জেলা গণধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পরপরই আমরা জানতে পারি যে, গোলাম রাব্বানীর আওয়ামী লীগের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। পরবর্তীতে আমি নিজে কেন্দ্রকে বিষয়টি অবগত করি। সর্বশেষ গোলাম রাব্বানীকে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে গত ৫ জুন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদকের স্বাক্ষকের মাধ্যমে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

রাণীনগর উপজেলা আ’লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল খালেক মুঠোফোনে জানান গত ২০২১সালে ২৫এপ্রিল গঠিত উপজেলা আ’লীগের কমিটিতে প্রাথমিক পর্যায়ে গোলাম রাব্বানীকে সদস্য পদ প্রদান করা হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়। এরপরও গোলাম রাব্বানী আ’লীগের একজন সুবিধাবাদী সক্রিয় কর্মী ছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন একজন সুযোগ সন্ধানী ও প্রতারক। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য গোলাম রাব্বানী নিজ আ’লীগ পরিবারের দোহাই দিয়ে রাজনীতি করতেন।