Image description

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া মিলবোর্ন বরো'র মেয়র নির্বাচনে জালিয়াতির অপরাধে দুই বাংলাদেশিকে কারাদণ্ড দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের জেলা বিচারক হার্ভে বার্টল পৃথক শুনানিতে এ কারাদণ্ড দেন।

কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুই বাংলাদেশী হচ্ছেন নুরুল হাসান (৪৮) ও রফিকুল ইসলাম (৫২)। নুরুল হাসানকে ৩৬ মাসের ও রফিকুল ইসলামকে ১২ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছে দেশটির আদালত।

জানা যায়, নির্বাচনী প্রতারণায় দোষী পেনসিলভানিয়ার মিলবোর্ন বরোতে মেয়র নির্বাচনে প্রতারণার মাধ্যমে ফলাফল প্রভাবিত করার চেষ্টায় জড়িত থাকার দায়ে তিন জন কাউন্সিল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আদালত।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি ডেভিড মেটকাফ জানান, বৃহস্পতিবার (স্থানীয় সময়) মিলবোর্ন বরো কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এমডি নুরুল হাসান এবং সাবেক সদস্য এমডি রফিকুল ইসলাম  আলাদাভাবে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজা পেয়েছেন। অপর অভিযুক্ত কাউন্সিল সদস্য এমডি মুনসুর আলী (৪৮) এর সাজা ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে ২৬ জুন।

ভোট জালিয়াতির উদ্দেশ্যে গঠিত পরিকল্পনা আদালতের দলিল অনুযায়ী, ২০২১ সালের মেয়র নির্বাচনে প্রাইমারিতে পরাজিত হওয়ার পর হাসান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তিনি আলী ও ইসলামের সহায়তায় একটি নির্বাচনী ষড়যন্ত্রে অংশ নেন।

তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা মিলবোর্নের বাইরে বসবাসকারী ব্যক্তিদের পরিচয় ব্যবহার করে ভুয়া ভোটার নিবন্ধন করেন এবং সেই ভুয়া ভোটারদের হয়ে মেইল-ইন ব্যালটে হাসানের পক্ষে ভোট দেন। এতে ভোটারদের নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ ব্যবহার করে অনলাইন নিবন্ধন করা হয় এবং ব্যালটে স্বাক্ষর জাল করে তা জমা দেয়া হয়। তবে, এই চক্রান্ত সফল হয়নি। নির্বাচনের দিন হাসান ১৩৮ ভোটের বিপরীতে ১৬৫ ভোটে পরাজিত হন।

আদালতে নুরুল হাসান ৩৩টি অভিযোগে দোষ স্বীকার করেছেন, যার মধ্যে একটি ষড়যন্ত্র, ১৬টি মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং ১৬টি ভুয়া ভোটার নিবন্ধনের অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত। তাকে ৩ বছর (৩৬ মাস) কারাদণ্ড, এক বছর তত্ত্বাবধানে মুক্তি, এবং তিনি হাজার ৩০০ ডলার জরিমানা প্রদান করা হয়েছে।

আর রফিকুল ইসলাম ৭টি অভিযোগে দোষ স্বীকার করেন। তাকে ১২ মাস ১ দিন কারাদণ্ড, এক বছর তত্ত্বাবধানে মুক্তি, এক হাজার ডলার জরিমানা, এবং সাতশত ডলার বিশেষ জরিমানা দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে মুনসুর আলী, যিনি বর্তমানে বরো কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে রয়েছেন, তার বিরুদ্ধে ২৫টি অভিযোগ রয়েছে এবং তিনি সবগুলোর দায় স্বীকার করেছেন। তার সাজা ঘোষণা হবে ২৬ জুন।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি ডেভিড মেটকাফ বলেন, এই আসামিরা তাদের নিজ সম্প্রদায়ের ভোটারদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে, যাতে জনগণের আস্থা অটুট থাকে।

এফবিআইয়ের ফিলাডেলফিয়া অফিসের বিশেষ এজেন্ট ইনচার্জ ওয়েইন জ্যাকবস বলেন, ভোটার প্রতারণা শুধুমাত্র ফেডারেল অপরাধ নয়, এটি গণতন্ত্রে জনগণের আস্থা ধ্বংস করে দেয়।

ডেলাওয়্যার কাউন্টির জেলা অ্যাটর্নি জ্যাক স্টলস্টেইমার বলেন, এই মামলায় এফবিআই ও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি অফিসের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ। মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই আমাদের গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।

এই মামলাটি যৌথভাবে তদন্ত করে এফবিআই এবং ডেলাওয়্যার কাউন্টির জেলা অ্যাটর্নি অফিস, এবং তা পরিচালনা করছেন সহকারী মার্কিন অ্যাটর্নি মার্ক বি. ডুবনফ।