Image description

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানায় পুলিশের অভিযানে শেখ জুয়েল নামের এক বিএনপি'র কর্মীকে ইয়াবাসহ আটকের পর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানা এলাকা থেকে ইয়াবা সহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। 

আটককৃতরা হলেন, বাঙ্গরা গ্রামের মৃত কানু মিয়ার ছেলে হেলাল (৪২) ও তার স্ত্রী শারমিন ওরফে সখিনা (৩৫), একই গ্রামের মৃত শেখ গোলাম সারোয়ার খোকনের ছেলে শেখ জুয়েল (৪৫), আজগর আলীর ছেলে খোকন (৪৫) এবং দৌলবাড়ি গ্রামের ইউনুস মিয়ার ছেলে হান্নান (২১)।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঙ্গরা বাজার ব্রিক ফিল্ড এর পূর্ব পাশে জনৈক হেলালের বাড়ি থেকে ৭০ পিস ইয়াবাসহ শেখ জুয়েল ও তার ৪ সহযোগীকে আটক করে থানায় আনা হয়। পরে রাতে থানা হাজতে থাকা অবস্থায় জুয়েল অসুস্থ হয়ে পড়লে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

পরিবারের দাবি, পুলিশের নির্যাতনে জুয়েলের মৃত্যু হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে জুয়েলের মরদেহে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকেও নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।

জুয়েলের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমার স্বামী ইন্টারনেটের বিল কালেকশন করতে যায়। দুপুরের পরপরই খবর পাই যে আমার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পরে থানায় গিয়ে আমার স্বামীর সাথে কথা বলতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। অনেক অনুরোধ করে তার সাথে দেখা করি। সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় আমার স্বামী আমাকে বলেছে যে, আমি কিছু করি নাই। আমাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করো। পরে রাতে খবর পাই আমার স্বামীকে মুরাদনগর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার স্বামী আর বেঁচে নেই। পুলিশ আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে।

জুয়েলের  চাচাত ভাই বিএনপি নেতা শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই জুয়েল বিএনপির কর্মী ছিলো। বাঙ্গরা বাজার থানার এসআই আল আমিন তাকে ধরে নিয়ে গেছে খবর পেয়ে রাত সাড়ে আটটায় কল দিয়ে জুয়েলের বিষয়ে জানতে চাই। তখন তিনি আমাকে মুরাদনগর হাসপাতালে আসতে বলে। হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাইকে মৃত অবস্থায় ফেলে রেখেছে।

মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে জুয়েলকে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। আমরা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে তাকে মৃত অবস্থায় পাই। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। 

এদিকে মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানাজানি হলে বিএনপি'র নেতাকর্মীরা রাতে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বাঙ্গরা বাজার থানার সামনে বিক্ষোভ করে।

এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে রাত পৌনে ১টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, শেখ জুয়েলের আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলে যে বিষয়টি জানতে পেরেছি, জুয়েল দীর্ঘদিন গাজাঁ সেবন করত এবং বর্তমানে সেই ইয়াবা সেবন কর। জুয়েলের পাড়া-প্রতিবেশী ও বলছে সে নিয়মিত মাদক সেবন করে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইয়াবা সেবন করা অবস্থায় জুয়েল ও তার আরও ৪ সহযোগীকে আটক করে তাদের কাছ থেকে ৭০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারপূর্বক থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে রাতে থানায় সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, আটক জুয়েলকে পুলিশ নির্যাতন করেনি। অন্য কোন কারণে তার মৃত্যু হতে পারে। শুক্রবার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।