Image description

বরিশালে আবাসন ও মামলা সংকটে পড়েছে দুই আদালত। ফলে একদিকে যেমন মামলার জট বাড়ছে, তেমনি অপচয় হচ্ছে সরকারি অর্থের। এমনটা বলছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। বরিশালের সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে প্রয়োজনীয় সকল কিছু থাকলেও নেই বিচার করার মতো একটি মামলাও। গত ৬ ফেব্রুয়ারী থেকে কোন মামলা ছাড়াই চলছে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালটি। মামলা ছাড়া ট্রাইব্যুনালের বিচারকসহ কর্মরতরা শুধু অফিসে এসে অলস সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। আর মাস শেষে নিচ্ছেন বেতন-ভাতাদি।

অন্যদিকে বরিশাল মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক-কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও নেই মামলা ও আবাসন। ফলে গত ৩-৪ মাস ধরে তারা বসে বসে বেতন-ভাতাদি নিচ্ছেন। অন্যদিকে জেলা জজ আদালতে বাড়ছে মামলার জট। ন্যায় বিচার পেতে বেগ হয় বিচারপ্রার্থীদের।

জানা গেছে, গত ২ জুন বরিশাল মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারক (প্রধান জজ) হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মীর মোঃ এমতাজুল হক কে নিয়োগ দেয় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বরিশাল মহানগর দায়রা জজ আদালতের তিনজন জজ সহ ১১ জনকে নিয়োগ দেয় বিচার বিভাগ। 

এরা হলেন, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো: হুমায়ুন কবীর, প্রথম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ মোঃ শিবলী নোমান খান, দ্বিতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ মোঃ ইউসুফ আব্দুল্লাহ, আদালতের নাজির মোঃ বদরুল হাসান, বেঞ্চ সহকারী মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ও মোঃ আল আমিন, প্রধান তুলনা কারক মোঃ জাহিদুল ইসলাম, রেকর্ড কিপার মোঃ আলমগীর হোসেন ও সাটলিপিকার মোঃ সাইদুল ইসলাম চৌধুরীকে নিয়োগ দেয় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। 

সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ায়ী থেকে বরিশাল সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ১৩টি মামলার বিচার হয়েছে এই ট্রাইব্যুনালে। সকল মামলার আসামীরা খালাস পেয়েছেন। বরিশালের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ভবনের ১০ তলায় ট্রাইব্যুনালের এজলাস। বর্তমানে একজন বিচারক (সিনিয়র জেলা জজ মর্যাদা), একজন বেঞ্চ সহকারী, একজন পিএ টু ষ্টেনোগ্রাফার, দুই জন অফিস সহকারী ও বিচারকের গাড়ী চালক রয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী কাজী হুমায়ুন কবির বলেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারী সর্বশেষ মামলাটি রায় হয়। এর পর থেকে ট্রাইব্যুনালে কোন মামলা নেই। 

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি কাজী বসির উদ্দিন বলেন, জঙ্গীদের মামলা দ্রুত বিচারে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। গত সরকারের সময় এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলেও তিনি পিপি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তিনটি মামলা পেয়েছেন। তিনটি মামলার রায় হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালে সব কিছু আছে কিন্তু কোন মামলা নেই। এই আইনের মামলা না হলে কোন কাজ হবে না। সবাই বসে থাকবেন। সরকারের বেতন-ভাতা নেবেন।

এ্যাড. সরোয়ার হোসেন বলেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মামলার জট রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিস্ফোরক দ্রব্যে ও বিশেষ ক্ষমতা আইন কিংবা হত্যা মামলা বিচারের জন্য ওখানে পাঠানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

যেহুতু সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে কোন মামলা নেই, তাই ওখানে বরিশাল মহানগর দায়রা জজ আদালত স্থাপন করা যেতে পারে। কর্তৃপক্ষের উচিত বিচার কার্যক্রমকে তরান্বিত করতে দ্রুত এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

এদিকে বুধবার (১৮ জুন) বরিশাল মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মীর মোঃ এমতাজুল হক যোগদান করেছেন। দ্রুত আবাসন ও মামলা পেলে মহানগর দায়রা জজ আদালতের কার্যক্রম শুরু হবে।