Image description

রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে ৩ নং চিৎমরম ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড মুসলিম পাড়া এলাকার সাম্পান মাঁঝি মোঃ আবু তাহেরের বাড়িতে বন্য হাতির তান্ডব চালিয়ে ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড করে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কাপ্তাইয়ের পাহাড়ি জনপদের মানুষ বন্যহাতির জন্য অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। 

রবিবার (২৫ মে) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে বন্যহাতিটি ব্যাঙছড়ি মুসলিম পাড়ার থেকে কর্ণফুলী নদীর ঘাট থেকে নেমে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে সরাসরি চিৎমরম মুসলিম পাড়া আবু তাহের বাড়ি উঠানে চলে আসে এরপর আবু তাহের বাড়ি পিছন থেকে ডুকে নন্ডভন্ড করে সামনে দিক থেকে বের হয়ে বেশ কয়েকেটি আমন ফসলের মৌসুমে মাঠের ফসল ও গাছের কাঁঠাল খেয়ে সাবার করে ফেলেছে। এখন মাঠে ফসল না থাকায় ক্ষুধার্ত হাতিগুলো বসতবাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। হামলা চালিয়ে বসতবাড়িতে থাকা গোলার ধান চাল খেয়ে সাবার করে চলেছে। বন্য হাতির আক্রমণে তার বসতঘর ব্যাপক ভাবে ক্ষতিসাধন হয়। তার বসত ঘর মেরামত করার আর্থিক সামর্থ্য নেই। এতে তার  বসত ঘরের আসবাবপত্রসহ সবকিছু নষ্ট করে দিয়েছে এই বন্যহাতি। 

এসময় আবু তাহেরের স্ত্রী রহিমা বেগম জানান, বাড়ির পেছন থেকে হাতি ডুকে রুমের দরজা, জানালা ভাঙচুর করে ভিতরে প্রবেশ করে সামনের দিকে বের হয়। তিনি আরও বলেন, কোনরকম ভাবে স্বামী ও ছেলে নিয়ে বসবাস করতাম বাড়িতে এখন আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল সবকিছু চুরমার করে দিল আমরা এখন কোথায় যাব। সামনে আমাদের কোরবানি ঈদ কত মানুষের আনাগোনা হবে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বাড়িতে যাবে। আমাদের এমনিতে অনেক দেনা আছে এইরকম পরিস্থিতিতে কিভাবে কি করব কোন কিছু বুঝতে পারছিনা। এই পরিস্থিতিতে সরকার যদি আমাদের'কে অতি দ্রুত বাড়ি সংস্কার ব্যবস্থা করে তাহলে তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকব। 

এ বিষয়ে আবু তাহেরের ছেলে, ওসমাণ গণি চিৎমরম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জানান, আমাদের বাড়িতে হাতি ভাঙচুর করেছে। আমাদের এখন ঘর নাই যা একটু ছিল সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, সামনে আমার অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা বাবা আমাকে সাম্পান চালিয়ে কোনরকম ভাবে কিছু আয় করে সংসার এবং পড়ালেখা চালিয়ে নিয়ে যেত। এখন সেটি আরও কঠিন ভাবে দাড়ালো।

চিৎমরম ৫ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম জানান, হাতির আক্রমণ হতে অসহায় গরীব ঘাট মাঝির আবু তাহের পরিবারের সকলে প্রাণে রক্ষা পেলেও। তাদের ঘরবাড়ি আসবাবপত্র কোন কিছু রেহাই  করতে পারেনি। তাদের আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দু’লক্ষাধিক টাকা। তারা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।

এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি দক্ষিণ বন বিভাগ কর্ণফুলী সদর সহকারী বন সংরক্ষক আবু কাউসার বাপ্পি (রেঞ্জ ট্রেনিং) জানান, সকালে ঘটনাস্থলে  আমরা পরিদর্শনে গিয়েছি প্রতিবেদন রিপোর্ট করে উর্দ্বতন কর্মকর্তার কাছে আমরা পাঠাবো। তবে বন্যহাতি দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে আবেদনের প্রেক্ষিতে বনবিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

এর আগে গত ১৬ই অক্টোবর বন্যহাতির পালের আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কাপ্তাই সীতার ঘাট মন্দিরের কয়েকটি স্থাপনা। এসময় বন্যহাতির আক্রমন মন্দিরের কয়েকটি রুম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সেইসাথে মন্দিরের আশেপাশে কয়েকটি। ২১ অক্টোবর দিবাগত রাত ৩টার দিকে বন্যহাতির আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কাপ্তাই পুলিশ সার্কেল অফিসের ব্যারাকে। এলাকা ছাড়াও কাপ্তাইয়ের ব্যঙছড়ি, ডংনালা, রাইখালী, চিৎমরম সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় হঠাৎ করে বন্যহাতির তান্ডব বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বনে খাদ্য সংকটে বন্যহাতির পাল লোকালয়ে এসে হামলা করছে।