Image description

১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে সাবেক বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান তালুকদারকে 'জুলাই অভ্যুত্থান' সংক্রান্ত একটি মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বরিশাল জেলার সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব (পদ স্থগিত) মারযুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, মারযুকের পক্ষ নিয়ে সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই অতি উৎসাহী হয়ে মিজানকে থানায় ডেকে নিয়ে ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর অভিযোগ করা হয়েছে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধেও।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে বরিশাল প্রেসক্লাবে মিজানুর রহমানের পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই  অভিযোগ করেন মিজানুর রহমান তালুকদারের বোন লিপি হাসান। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লিপি হাসান বলেন, তার ভাই মিজানুর রহমান তালুকদার বরিশাল নগরীর একজন সুপরিচিত ব্যক্তি এবং রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি। বর্তমানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে তাবলীগ জামাতের সাথী হিসেবে ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে জড়িত।

তিনি জানান, গত জুলাই অভ্যুত্থানে তার ভাই রাজপথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছেন। এমনকি মিজানের ছেলে সাজিদুর রহমান তোহা এবং ওবায়দুর রহমান সাদও জুলাই বিপ্লবে বিএম কলেজ, নথুল্লাবাদ এলাকা, চৌমাথা এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শুরু থেকে সকল আন্দোলন কর্মসূচিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন।

লিপি হাসান অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার প্রায় ১০ মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব মারযুক আব্দুল্লাহ বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় ২৪৭ জন নামধারী আসামি ও অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। 

লিপি হাসানের দাবি, মারযুক আব্দুল্লাহ 'আওয়ামী লীগের 'বি' টিম' হয়ে আর্থিকভাবে লাভবান এবং বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর জুলাই বিপ্লবের সপক্ষে আন্দোলন সংগ্রামকারী নেতাদের হয়রানি করার লক্ষ্যে এই মামলা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই মামলা নিয়ে শুরু থেকেই ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। মামলায় বরিশালের আওয়ামী লীগের সম্মুখ সারির সন্ত্রাসীরা, যারা ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছিল, তাদের নাম নেই। অথচ সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ বরিশালের বাহিরের জেলা-উপজেলার লোকদের নাম রয়েছে।

লিপি হাসানের অভিযোগ, মারযুক আব্দুল্লাহ বিভিন্ন সময়ে তার ভাইয়ের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। সেই টাকা না দেওয়ায় তাকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে বুধবার (২১ মে) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তার ভাইয়ের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বরিশাল টেকনোক্রাটস পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে মারযুক আব্দুল্লাহ ও তার সঙ্গে ২-৩ জন ব্যক্তি অবস্থান নেন। পরবর্তীতে পুলিশের একজন এসআই মিজানুর রহমানকে থানায় ডেকে নিয়ে মারযুক আব্দুল্লাহর মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেন। বিস্ফোরক মামলা হওয়ায় আদালত তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন।

লিপি হাসান দাবি করেন, মামলার বাদী মারযুক আব্দুল্লাহ একটি বিশেষ শ্রেণির এজেন্ডা বাস্তবায়নের মিশনে কাজ করছেন। তার 'মামলা বাণিজ্য ও চক্রান্ত' সকলের সামনে প্রকাশ পেয়েছে এবং জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে এসেছে। এমনকি 'মামলা বাণিজ্যের' কারণে তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল পদ স্থগিত করা হয়েছে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান এবং কয়েকজন এসআই এই অবৈধ কাজে সহযোগিতা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে এই মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করা নিরীহ ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে অতি উৎসাহী হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যান্য মামলার আসামি এবং সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিপি হাসান তার ভাই মিজানুর রহমান তালুকদারের মুক্তি এবং 'মামলাবাজ, অর্থলোভী' মারযুক আব্দুল্লাহ ও 'অতিউৎসাহী' পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেন।

এসময় বিএনপি নেতা মিজানুর রহমানের স্ত্রী, দুই ছেলে, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিবসহ বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।