Image description

ভোরের আলো রাঙিয়ে তোলে কাপ্তাই হ্রদের শান্ত জল। আর সেই আলো পড়তেই রাঙামাটির বনরূপার সমতাঘাট সেজে ওঠে এক ভিন্ন রূপে—যেন পাহাড়ের ফলভাণ্ডার এসে ভিড় করে এখানে। জৈষ্ঠ্যের শুরুতেই পাকা আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, লটকন, কালোজাম, গোলাপজাম, কদবেল, কলা আর রক্তগোটার মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠে চারপাশ।

সাঁঝ সকাল থেকে রাঙামাটির দূরদূরান্তের পাহাড়ি জনপদ থেকে মানুষজন তাদের উৎপাদিত ফল নিয়ে আসতে শুরু করে এই ভাসমান হাটে। কেউ আসে ছোট নৌকায়, কেউবা ইঞ্জিনচালিত বোটে বোঝাই করে আনে পাহাড়ের অমৃত ফল। সমতাঘাটের তীর ঘেঁষে কাপ্তাইয়ের বুকে সারিবদ্ধভাবে বাঁধা নৌকাগুলো যেন এক ভাসমান বাজারের চিত্র তৈরি করে—যেখানে থরে থরে সাজানো পাহাড়ের মিষ্টি ফল।

সরেজমিনে দেখা যায়, একের পর এক নৌকা এসে ভিড়ছে আর ক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠছে ঘাট। মুহূর্তেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের রসালো ফল। একদিকে বিশাল কাপ্তাই হ্রদের মনোরম দৃশ্য, অন্যদিকে এই ভাসমান বাজার—এই দুইয়ে মিলে রাঙামাটির বনরূপা বাজারের সমতাঘাট এক অসাধারণ আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে। শুধু ফল নয়, পাহাড়ের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসও মেলে এই ভাসমান হাটে। একই চিত্র দেখা যায় রাঙামাটির পুরাতন বাস স্টেশন ঘাটেও, যেখানে কাপ্তাইয়ের জলে ভাসমান নৌকায় সাজানো থাকে নানান মৌসুমি ফল। ব্যাপারীরা এসে সেই ফল কিনে ট্রাকে বোঝাই করে নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি শনিবার, সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার এই ভাসমান হাট বসে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই পাহাড়ের ফল নিয়ে হাজির হন বিক্রেতারা। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখান থেকে ফল কিনে নিয়ে যান। রাঙামাটির চাহিদা মিটিয়ে এই ফল দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

নানিয়ারচর থেকে নৌকা বোঝাই কাঁঠাল ও আনারস নিয়ে আসা রিটেন চাকমা জানান, ব্যাপারীর তার কাছ থেকে পাইকারি দরে কাঁঠাল কিনেছেন। তবে ফলন ভালো হলেও দাম কম থাকায় ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।

আরেক বিক্রেতা ডেনিয়েল চাকমা নিয়ে এসেছেন রাঙু জাতের মিষ্টি আম। নৌকায় করে সমতাঘাটে বিক্রি করছেন তিনি। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় আমের ফলন ভালো হয়নি বলে জানান তিনি।

রাঙামাটি সদরের বন্দুকভাঙ্গা থেকে লিচু নিয়ে এসেছেন অর্পণ চাকমা। তিনি জানান, লিচুর ফলন ভালো হলেও আকার ছোট হওয়ায় দাম কিছুটা কম। নৌকায় করেই তিনি প্রতিদিন এই লিচু বাজারে নিয়ে আসেন।

মোহন লাল চাকমা ইঞ্জিনচালিত বোটে করে আনারস নিয়ে আসেন নানিয়ারচর থেকে। প্রতি সপ্তাহে চার দিন তিনি এই ভাসমান হাটে আনারস বিক্রি করেন।

নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী মো. কাসেম জানান, তিনি প্রায় ১৭০০ পিস কাঁঠাল কিনেছেন, যা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে চাষিদের কাছ থেকে কেনা। এই ফল বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশা রাখছেন তিনি।

চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা মো. আবুল কালাম এই প্রথম বনরূপার সমতাঘাটের ভাসমান ফলের বাজার দেখে মুগ্ধ। তিনি বলেন, এখানে নানান ধরনের ফল একসঙ্গে দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে।