Image description

দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কোল ঘেঁষে যুগ যুগ ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক খাঁন জামে মসজিদ। শুধু একটি উপাসনালয় নয়, এই মসজিদ যেন বহন করছে মোঘল স্থাপত্যের নীরব স্মৃতি আর ধারণ করে রেখেছে বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) ও বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী (র.)-এর পবিত্র পায়ের চিহ্ন। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই পবিত্র নিদর্শন দর্শনের জন্য ছুটে আসেন চন্দনাইশ উপজেলার ৮ নং হাশিমপুর ইউনিয়নের বাগিচাহাটে অবস্থিত এই মসজিদে।

মসজিদের উত্তর পাশে একটি বিশেষ কক্ষে সযত্নে সংরক্ষিত আছে সেই অমূল্য স্মৃতিচিহ্ন – মহানবী (সা.) ও আবদুল কাদের জিলানী (র.)-এর পবিত্র পায়ের ছাপ। এই অলৌকিক নিদর্শন দর্শনের আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিদিন ভিড় করেন শত শত ভক্ত। মসজিদের দক্ষিণ পাশে সীমানা প্রাচীরঘেরা শান্ত চত্বরে শায়িত আছেন আরও বাইশ জন বীর যোদ্ধা। 

ইতিহাস বলছে, প্রায় ৩৫৪ বছর আগে, ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে মোঘল আমলে যখন চট্টগ্রামের দোহাজারীর সাঙ্গু নদীর তীর পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণের জন্য অভিযান পরিচালিত হয়, সেই অভিযানে নিহত হয়েছিলেন এই উচ্চপদস্থ মোঘল সেনারা। তাঁদের সমাধিস্থ করা হয় মসজিদের পাশেই। সেই সময় স্থানটির নামকরণ করা হয় ‘বাগ-ই-শাহ’ অর্থাৎ বাদশাহদের বাগান। কালের বিবর্তনে সেই নামই পরিচিতি লাভ করে আজকের ‘বাগিচাহাট’ নামে।

এই মসজিদের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তৎকালীন চট্টগ্রামের ফৌজদার ওয়াশিকা এবং সুফি সাধক আধু খাঁর নাম। আধু খাঁর তরবারির বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে ফৌজদার ওয়াশিকা তাঁকে চট্টগ্রাম নগরীর খাঁন মঞ্জিলে আমন্ত্রণ জানান। আধু খাঁ যখন চন্দনাইশের দোহাজারীর দুর্গে পৌঁছান, তখন তিনি সম্মানের সঙ্গে নিজের তরবারির হাতলটি ফৌজদারের কাছে পাঠিয়ে দেন। এই বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ফৌজদার ওয়াশিকা পবিত্র মক্কা নগরী থেকে আনা মহানবী (সা.)-এর পায়ের চিহ্ন খোদাই করা একটি পাথর আধু খাঁকে উপহার দেন। শুধু তাই নয়, তিনি আরও প্রদান করেন হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.)-এর পায়ের চিহ্ন।

আধু খাঁ পরম শ্রদ্ধায় সেই পবিত্র উপহারগুলো স্থাপন করেন তাঁরই বাগানবাড়ির মসজিদ – বাগিচাহাট খাঁন জামে মসজিদে। যা আজও সেখানে অমূল্য সম্পদ হিসেবে সংরক্ষিত আছে। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫০০ বছর আগে বিশিষ্ট ইসলাম প্রচারক ও সুফি সাধক হজরত শেরে জামান খান (র.) পবিত্র মদিনা শরিফ থেকে বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কদম মোবারক ও হাত মোবারকের ছাপ সংবলিত পাথর সংগ্রহ করে এনেছিলেন। পরবর্তীতে তা ফৌজদার ওয়াশিকার মাধ্যমে হাশিমপুর ইউনিয়নের বাগিচাহাট খাঁন শাহী মসজিদের ভেতরে স্থাপন করেন আধু খাঁ। সেই থেকে এই পবিত্র পাথরটি এলাকাবাসীর কাছে ‘হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কদম মোবারক’ নামেই পরিচিত। প্রতিদিন অসংখ্য আশেকে রাসুল (সা.) এই পবিত্র পদচিহ্ন জিয়ারত বা দর্শনের জন্য ছুটে আসেন এই ঐতিহাসিক মসজিদে। কালের সাক্ষী এই মসজিদ শুধু মোঘল স্থাপত্যের নিদর্শনই নয়, বরং নবীপ্রেমী মানুষের হৃদয়ের স্পন্দনও বটে।