Image description

কর্ণফুলি নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (ফ্রি ট্রেড জোন) স্থাপনের পরিকল্পনা করছে সরকার। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) একটি জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে। প্রকল্পটি বিনিয়োগের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখালেও, এর দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন পরিকল্পনাবিদরা।

বিডার প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, কর্ণফুলি টানেল পেরিয়ে আনোয়ারা উপজেলার দক্ষিণে প্রায় ৪০০ একর জমিতে এই মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে, তেমনি সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখানে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের প্রচলিত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে যেতে পারবেন এবং একইসাথে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির ব্যবহার করতে পারবেন। এটি উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক পরিস্থিতি তৈরি করবে।’

এই প্রকল্পের সামগ্রিক পর্যালোচনা ও বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরিতে বিডা একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে এবং চলতি বছরের মধ্যেই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ব্যবসায়ীরা সরকারের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়াডার্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন মনে করেন, ‘যারা বাংলাদেশে শিল্পভিত্তিক বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, তাদের জন্য এই মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে অনেক সুবিধা থাকবে। ফলে তারা বাংলাদেশমুখী হবেন এবং এটিকে তাদের আগ্রহের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’

সমুদ্র ও বিমান বন্দরের নিকটবর্তী হওয়ায় এই অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগের ভালো সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘এই উন্নয়ন পরিকল্পনা যেন আগামী অন্তত ১০০ বছর শহরের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যদি এ বিষয়ে পর্যাপ্ত সমীক্ষা করা না হয়ে থাকে, তবে এখনই তা করা জরুরি। শহরের ভবিষ্যৎ বৃদ্ধি এবং প্রসারের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করলে কোনো সংকট তৈরি হবে না।’

উল্লেখ্য, প্রায় এক দশক আগে এই অঞ্চলে একটি চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করা হলেও, সেটি এখনও পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এই প্রেক্ষাপটে নতুন এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এই নতুন মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে কতটা সক্ষম হয়।