
বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ না থাকলে অনেকেই বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, আর বিনিয়োগ না থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়বে- এটাই স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশের জন্য বিনিয়োগ বিষয়ে সুখবর পাওয়া যাচ্ছে- দেশে বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতে বড় বিনিয়োগ করবে বিদেশিরা। বাংলাদেশ প্রায় ১৮ কোটি মানুষের একটি দেশ। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের কাতারে উন্নীত হওয়া এ বদ্বীপ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে নানা কারণে।
প্রথমত বাংলাদেশের রয়েছে প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার। দ্বিতীয়ত বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীন ও ভারত বাংলাদেশের সন্নিকটে। বাংলাদেশের তিন দিকজুড়েই ভারতের উপস্থিতি। আর চীনও নিকট প্রতিবেশী দেশ। ঐতিহ্যগতভাবে ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যোগসংযোগের ভূমিকা পালন করছে ভৌগোলিকভাবে। এদেশে রয়েছে সস্তা শ্রম। যা বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এ যাবত বিদেশি বিনিয়োগ আশাব্যঞ্জক নয়।
বলা হতো, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে তাদের শঙ্কা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে। ইউটিলিটি সার্ভিস ব্যবস্থার উন্নতি, রাজস্ব ও ব্যাংকিং সিস্টেম সহজীকরণ, করকাঠামো সহনশীল করাসহ লালফিতার দৌরাত্ম্য নিয়েও তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা নিয়ে আসলে বাংলাদেশ বিশ্বকে বদলে দেবে বলে আশ্বস্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রধান উপদেষ্টা শুধু সুখবর দিয়ে যাচ্ছেন। তার চেষ্টা ও পরিশ্রম-মেধা কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য সুখবরের তালিকা দীর্ঘ করছেন।
ইতোমধ্যে কয়েকটি চীনা কোম্পানি ইলেকট্রনিক ভেহিক্যাল ট্রানজিশন, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদন, উইন্ড টারবাইনের মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস এবং অফশোর ফটোভোলটাইক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পরিবেশ যদি স্থিতিশীল থাকে, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে।
বিনিয়োগ ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব না। অস্বীকার করার উপায় নেই- বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশ অনেক পিছিয়ে। এদেশে গড় এফডিআই এখনও প্রত্যাশিত পর্যায়ে আসেনি। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ১৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি এফডিআই পায়। এই দুই দেশের সঙ্গে হয়তো আমাদের তুলনা চলে না। তাই বলে সমপর্যায়ের দেশেগুলোর চেয়েও পিছিয়ে থাকব আমরা! তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণে আমাদের নেয়া উদ্যোগ আরো বাড়াতে হবে এবং বাস্তবায়নে সবার স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার বিকল্প নেই। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে উন্নতি হবে, যা বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে, সন্দেহ নেই।
বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, এজন্য সর্বাগ্রে দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। দ্বিতীয়ত আমলাতান্ত্রিক যথেচ্ছার অবসান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কীভাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা যায়- সেই সুব্যবস্থা করা। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অধিক হারে বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসুক- এমন পরিবেশ প্রত্যাশা সবার।
Comments