Image description

আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব নার্স দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের নার্সরা আমাদের ভবিষ্যৎ : নার্সদের যত্ন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে’। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত নার্স আছে এক লাখ তিন হাজার ১৫১ জন। যেখানে জনসংখ্যা অনুপাতে প্রয়োজন তিন লাখের বেশি নার্স। ফলে প্রয়োজনের মাত্র ৩৪ শতাংশ নার্স দিয়ে চলছে দেশের স্বাস্থ্যসেবা, যা সেবার মানে চরম সংকট তৈরি করছে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে শুধু রোগীরাই সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না, একেকজন নার্সকে গড়ে দ্বিগুণের বেশি কাজ করতে হচ্ছে। তাতে চাপ বাড়ছে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স থাকা আদর্শ।

কিন্তু বাংলাদেশে চিত্রটা প্রায় উল্টো—একজন নার্সকে কাজ করতে হয় তিনজন চিকিৎসকের সঙ্গে। আবার প্রতি পাঁচজন রোগীর জন্য একজন নার্স থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে একজন নার্সকে সামলাতে হয় শতাধিক রোগী। এতে কাজের চাপ যেমন বাড়ছে, তেমনি স্বাস্থ্যসেবার মানও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের (এসএনএসআর) মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, চিকিৎসকদের তুলনায় নার্সদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো বৈষম্যমূলক।
 
তাঁর ভাষায়, পেশাটি অবহেলিত। বেতন কাঠামো নিম্নমানের, পদোন্নতি নেই, অবসরে যাচ্ছেন অনেকে চাকরির শুরুর পদেই। ৯০ শতাংশ নার্সের জন্য নেই আবাসনব্যবস্থা। ঝুঁকি ভাতা এখনো চালু হয়নি। ধোলাই ভাতা মাত্র ২১৯ টাকা! তিহান বলেন, নার্সিং ইনস্টিটিউটগুলোতেও ঘাটতি।

অনেক প্রতিষ্ঠান সিনিয়র স্টাফ নার্সদের দিয়েই চলছে, যাঁরা অধ্যাপক বা প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করছেন সংযুক্তি হিসেবে। যদিও গত বছর কিছু প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এসএনএসআরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে চিকিৎসক আছেন প্রায় এক লাখ ৩৪ হাজার। সে অনুযায়ী নার্স দরকার চার লাখ দুই হাজার। তবে নিবন্ধিত নার্স আছেন মাত্র এক লাখ ১০ হাজার, ঘাটতি প্রায় দুই লাখ ৯২ হাজার। প্রতিবছর সরকারি-বেসরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ৩৬ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও গড়ে মাত্র ১২ হাজার পেশায় যুক্ত হন।
 
বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খান মো. গোলাম মোরশেদ বলেন, রাষ্ট্রের কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই। নার্স তৈরি হচ্ছে, কিন্তু কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ২০২১ সালের পর থেকে সরকারি চাকরিতে নার্স নিয়োগ বন্ধ। বিদেশে নার্সের চাহিদা থাকলেও উপযুক্ত নীতিমালা ও আইনি কাঠামোর অভাবে পাঠানো যাচ্ছে না।

গোলাম মোরশেদ আরো বলেন, যথাযথ বেতন কাঠামো, মানসম্মত শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত না করলে নার্স সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের (বিএনএমসি) রেজিস্ট্রার হালিমা আক্তার বলেন, নার্স সংকট দীর্ঘদিনের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও কাউন্সিল একসঙ্গে কাজ করছে। তবে চাহিদার তুলনায় নার্স তৈরির হার অনেক কম। বিদেশে চাহিদা বাড়ায় সংকট আরো প্রকট হচ্ছে।
 
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন এই সংকট নিরসনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা, গ্লোবাল কম্পিটেন্সি ফ্রেমওয়ার্ক গ্রহণ, নিয়মিত অ্যাক্রেডিটেশন ও মূল্যায়ন, নীতিমালাবহির্ভূত প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের জন্য নিরীক্ষা ও অডিট কার্যক্রম চালু।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতের মূল ভিত্তি হিসেবে নার্সদের উপযুক্ত স্বীকৃতি ও মর্যাদা না দিলে শুধু সেবার মান নয়, পুরো ব্যবস্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে।