Image description

রাজশাহীর চারঘাটে সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের অনুমোদন হওয়ার আগেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা নির্বিচারে প্রায় ২৫০টির বেশি গাছ কেটে ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী কোটি টাকা মূল্যের এসব গাছ রক্ষায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও বন বিভাগ একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাবিবপুর থেকে মৌলভাগ বাসুদেবপুর পর্যন্ত ১০ ফুট প্রশস্ত একটি পিচঢালা সড়ক রয়েছে। সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত করে নতুন করে কার্পেটিং করার জন্য সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডি। তবে সড়ক সম্প্রসারণের জন্য কোনো প্রকার গাছ কাটার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন এখনো দেওয়া হয়নি।

অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৫ এপ্রিল থেকে সড়কের দুই পাশের জমির মালিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে পুরাতন ও বড় আকারের মেহগনি, কড়ই, আকাশমনি ও শিশুসহ বিভিন্ন মূল্যবান কাঠজাতীয় গাছ কাটা শুরু করেন। গত ১৫ দিনে প্রায় ২৫০টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সড়কের দুই পাশে শত শত কাটা গাছের গোড়া এর সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করছে।

স্থানীয়রা জানান, এলজিইডি ও বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে প্রায় ২০ বছর আগে এসব গাছ লাগানো হয়েছিল, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা। 

বাসুদেবপুর এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিমসহ অনেকের অভিযোগ, এলজিইডি অফিসের লোকজনই নাকি রাস্তার কাজ শুরু করার আগে পাশের জমির মালিকদের গাছগুলো কেটে নিতে উৎসাহিত করেছে। 

সড়কের পাশের জমির মালিক রহিদুল ইসলাম জানান, সড়ক প্রশস্ত হওয়ায় গাছগুলো এমনিতেই কাটা পড়বে ভেবে ঠিকাদারের লোকজন তাদের গাছ কাটতে বলায় তিনি গাছ কেটেছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) চারঘাট উপজেলা শাখার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলজিইডি ও বন বিভাগ একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে, কিন্তু গাছগুলো বাঁচানোর দায়িত্ব কেউ নেয়নি। এটি পরিবেশের জন্য চরম ক্ষতিকর কাজ।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী রতন কুমার ফৌজদার জানান, হাবিবপুর থেকে বাসুদেবপুর সড়কটি আট ফুট প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গাছগুলো বন বিভাগের লাগানো হওয়ায় সেগুলো অপসারণের জন্য বন বিভাগের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। গাছ কাটার সিদ্ধান্ত বন বিভাগ নেবে। তবে সড়কের ফাঁকা অংশে ঠিকাদার কাজ শুরু করেছে।

অন্যদিকে, উপজেলা বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, গাছগুলো বন বিভাগের নয়, এলজিইডির। তিনি আরও বলেন, গাছের ব্যাপারে একটি চিঠি পেলেও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই প্রভাবশালীরা নিজেদের ইচ্ছামতো গাছগুলো কেটে নিয়েছে। ঠিকাদার সড়কের গাছ কাটতে বলেছে বলেও তিনি শুনেছেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, সড়কের গাছ কাটার বিষয়ে উপজেলা বন বিভাগকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কাউকে মৌখিক বা লিখিতভাবে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়নি এবং এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।