Image description

গ্রীষ্মের খরতাপে পোড়া এপ্রিল মাস মানেই চুয়াডাঙ্গার মানুষের কাছে এক দুঃসহ স্মৃতি। গত বছর এপ্রিলের শেষ দিন জেলার তাপমাত্রা ছুঁয়েছিল রেকর্ড ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছিল জনজীবন।  আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাসেও ছিল এ বছরও এপ্রিলের চিত্রটা একই রকম হতে পারে। তবে প্রকৃতি যেন এবার ভিন্ন সুর গেঁথেছে।

এক বছরের ব্যবধানে চুয়াডাঙ্গায় এবারের এপ্রিল মাস ছিল অনেকটাই ব্যতিক্রম। তীব্র গরমের পূর্বাভাস থাকলেও, বাস্তবে তা অনুভূত হয়নি। গতকাল বুধবার (৩০ এপ্রিল) বেলা তিনটায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে গত বছর একই দিনে তাপমাত্রা ছিল ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুধু তাই নয়, বাতাসের আর্দ্রতাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। গত বছর যেখানে আর্দ্রতা ছিল মাত্র ১২ শতাংশ, এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরে তাপমাত্রা কমেছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা বেড়েছে ৬৭ শতাংশ।

পাঁচ বছরের এপ্রিল মাসের তাপমাত্রার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার জেলা হিসেবে পরিচিত চুয়াডাঙ্গায় এবারের এপ্রিল ছিল সবচেয়ে শীতল। হাটকালুগঞ্জের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের তাপমাত্রা পর্যালোচনায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছর এপ্রিলের ৩০ দিনের মধ্যে ২৫ দিনই চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তাপপ্রবাহ। এর মধ্যে ১৪ দিন ছিল তীব্র তাপপ্রবাহ, যখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এছাড়া ৯ দিন মাঝারি ও ২ দিন মৃদু তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়। ১৯৮৪ সালে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার প্রতিষ্ঠার পর গত বছরের এপ্রিলের তাপমাত্রা ছিল জেলার ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এর আগে ২০২৩ সালের এপ্রিলে চুয়াডাঙ্গায় ২২ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ২১ দিন এবং ২০২২ সালে মাত্র ৯ দিন। তবে চলতি বছর ২০২৫ সালের এপ্রিলে তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দিন, যার মধ্যে তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল না। মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত পাঁচ বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় সর্বনিম্ন।

চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান এই তাপমাত্রার পরিবর্তনের প্রধান কারণ হিসেবে বৃষ্টিপাতকে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, জেলার স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ৩৯ মিলিমিটার হলেও, গত বছর এপ্রিলে বৃষ্টিপাত ছিল মাত্র ২ মিলিমিটার। বিপরীতে, এ বছর এপ্রিলে ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩১ মিলিমিটার বেশি।

তিনি আরও জানান, চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়ার সঙ্গে ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর ও মধ্যপ্রদেশের আবহাওয়ার মিল রয়েছে। সেখানেও এ বছর এপ্রিলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং মাসের বেশিরভাগ সময় আকাশ মেঘলা ছিল। এই কারণে সার্বিকভাবে তাপপ্রবাহের তীব্রতা কমেছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এপ্রিলের ৩ ও ৪ তারিখ ছাড়া দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছে। ১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে ৪ হাজার ৮২৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। মাসটিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে, ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৮ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে গেলেও, এর মধ্যে তীব্র বা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল না।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, স্থানীয়ভাবে সৃষ্ট মেঘের বৃষ্টি তাপপ্রবাহ কমাতে সহায়ক না হলেও, তাপপ্রবাহের সময় বড় ধরনের বজ্রঝড় তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনে। এ বছর মৃদু তাপপ্রবাহের মাঝেই বজ্রঝড় হওয়ায় মাঝারি তাপপ্রবাহ তীব্র হতে পারেনি এবং মৃদু তাপপ্রবাহও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।