
বাংলাদেশে বজ্রপাত এখন এক ক্রমবর্ধমান আতঙ্কের নাম। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। বিশেষত কৃষক, জেলে এবং খোলা স্থানে কাজ করা মানুষের জীবন হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বজ্রঝড়ের তীব্রতা এবং সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত এক দশকে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। এই ভয়াবহতা মোকাবিলায় প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ এবং ব্যাপক জনসচেতনতা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট এই অপ্রত্যাশিত বিপদ থেকে রক্ষা পেতে কিছু করণীয়-
১. উঁচু স্থান পরিহার: বজ্রপাতের সময় উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটির কাছাকাছি আশ্রয় নেওয়া বিপজ্জনক। এসব স্থান থেকে কমপক্ষে চার মিটার দূরে থাকুন। সবচেয়ে নিরাপদ হলো নিকটবর্তী পাকা বাড়ির নিচে আশ্রয় নেওয়া।
২. খোলা স্থানে সতর্কতা: ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে দ্রুত কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসুন এবং চোখ বন্ধ রাখুন। কোনো অবস্থাতেই মাটিতে শোবেন না, কারণ এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৩. ছাদ ও উঁচু স্থান ত্যাগ: খোলা মাঠ, বাড়ির ছাদ বা অন্য কোনো উঁচু স্থান এড়িয়ে চলুন। গবাদি পশুকেও খোলা মাঠে রাখবেন না।
৪. জানালা-বারান্দা থেকে দূরে থাকা: বজ্রপাতের সময় ঘরের বারান্দা ও জানালার কাছে থাকা নিরাপদ নয়। জানালা বন্ধ করে ঘরের ভেতরে অবস্থান করুন। এ সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ এবং ল্যান্ডফোন স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
৫. বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বন্ধ রাখুন: বজ্রপাতের সময় বিদ্যুত্চালিত যন্ত্র ব্যবহার করা উচিত নয়। টিভি, ফ্রিজসহ বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখুন এবং প্লাগ খুলে বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করুন। অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগও খুলে রাখুন।
৬. গাড়িতে সতর্কতা: বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে দ্রুত কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে পার্ক করুন এবং গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
৭. জলাশয় ত্যাগ: বজ্রপাতের সময় নদী বা জলাশয়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখুন এবং জলাশয় বা জলাবদ্ধ স্থান থেকে দূরে সরে যান। পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী হওয়ায় এটি বিপজ্জনক হতে পারে। নৌকায় থাকলে দ্রুত ছইয়ের নিচে আশ্রয় নিন। ছই না থাকলে নিচু হয়ে পাটাতনে বসুন।
৮. জুতা নির্বাচন: বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের জুতা এ সময় সবচেয়ে নিরাপদ।
৯. বাসস্থান পরিকল্পনা: লোকালয় থেকে দূরে উন্মুক্ত স্থানে বাড়ি নির্মাণ করা উচিত নয়। বাড়ির আশেপাশে নিরাপদ দূরত্বে তাল, নারিকেল, সুপারিগাছের মতো উঁচু গাছ লাগান যা বজ্র নিরোধে কিছুটা সাহায্য করতে পারে।
১০. বজ্রনিরোধক স্থাপন: বাড়িকে বজ্রপাতের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে বজ্রনিরোধক যন্ত্র স্থাপন করুন এবং সঠিকভাবে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা রাখুন।
১১. আহতদের চিকিৎসা: বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতোই চিকিৎসা দিন। দ্রুত চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যান এবং আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যান।
Comments